ইটভাটার নারী শ্রমিকদের জীবন-সংগ্রাম

খোদেজা বেগমের (৫৫) বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চরগড়পাড়া গ্রামে। এক ছেলে আর দুই মেয়ের মা। স্বামী লুৎফর রহমান কয়েক বছর ধরে নানান অসুখে জর্জরিত। কাজ করার সামর্থ্য না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। একমাত্র ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। সংসারে কোনও টাকাপয়সা দেয় না সে। এখন খোদেজা বেগমের যেন টেনশনের শেষ নেই। বয়সের কারণে আগের মতো ভারী কাজ করতে পারেন না। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ করছেন তিনি।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মুলজান এলাকায় অবস্থিত একটি ইটভাটায় কাজ করা নারী শ্রমিকদের খোঁজখবর নিতে গেলে কথা হয় খোদেজা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ইটভাটায় মাটি টানাসহ নানা কাজ করে পান ২৬০ টাকা। এই দিয়ে কোনোমতে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চলে খোদেজা বেগমের সংসার। কিন্তু যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন রান্নার হাড়ি উনুনে উঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।

একই অবস্থা তার সঙ্গে কাজ করতে আসা সন্ধ্যা রানীরও (৬০)। সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মণীন্দ্র সরকারের স্ত্রী তিনি। দুই ছেলের দুজনই বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার করছে। অসুস্থ স্বামী আগের মতো খাটা-খাটুনি করতে পারেন না। সংসার চালাতে সন্ধ্যা রানীকেও  হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়।

আরও কথা হয় সদর উপজেলার চর গড়পাড়া গ্রামের মালাতনের (৫৫) সঙ্গে। স্বামী পরিত্যক্ত ওই নারীর সংসারে আছে এখন একমাত্র ছেলে। মায়ের ভরণপোষণের দায় নিতে তারও গাছাড়া ভাব। স্বামী সাজাহান আলী বছর তিনেক ধরে অন্য একজনকে বিয়ে করে আলাদা থাকে। মালাতনের তিন বেলার খাওয়ার টাকা নিজেকেই কামাই করে জোগাড় করতে হয়। আর কখনও যদি নিজে অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তখন মড়ার উপর খাড়ার ঘার মতো অবস্থা হয়।

Puspo & Sandhaমালাতন জানান, সেই সাতসকালে চলে আসেন ইটের ভাটায়। কাজ শেষে সন্ধ্যায় হাতে করে নিয়ে যান ২৬০ টাকা। এই টাকা দিয়ে চলে তার সংসার। ক্লান্তিহীন পরিশ্রম তার ওপর দিনভর ধুলো-বালির মধ্যে বসবাস। প্রতিমাসে লেগে থাকে নানান অসুখ-বিসুখ। সংসার কোনোমতে চললেও অসুখ-বিসুখের ওষুধের টাকার জন্য অন্যের কিংবা ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিতে হয়। গত তিন বছর ধরে তিনি কাজ করছেন ওই ইটভাটায়, কিন্তু সঞ্চয় করতে পারেননি একটি টাকাও। মালাতনের মতো এমন অবস্থা আরও অনেকেরই।