ভারত থেকে ফেরার একমাত্র পথ আখাউড়ায় বেড়েছে যাত্রীর চাপ

ভারতের কলকাতার উপ-হাইকমিশন ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরার ক্ষেত্রে আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্ট দিয়ে অনেকটা চাপ বেড়েছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন এখনও এনওসি দিচ্ছে। ফলে চিকিৎসা করাতে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে এনওসি নিতে সেখানে ভিড় বাড়ছে।

কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অপ্রতুল কোয়ারেন্টিন অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য দিক বিবেচনায় ৯ মে থেকে এনওসি দেওয়া বন্ধ আছে। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত তা বলবত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল স্থলসীমান্ত পথে ভারতের সঙ্গে যাত্রী চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। দুই সপ্তাহের এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে ১০ মে তা বাড়ানো হয় আরও ১৪ দিন। ফলে ২৩ মে পর্যন্ত থাকছে এই নিষেধাজ্ঞা। যাত্রী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি ও বাংলাদেশে আটকেপড়া ভারতীয়দের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধা নেই। বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী এই তিন বন্দর দিয়েই আটকেপড়ারা দেশে ফিরতে পারছেন। তবে এই জন্য উভয় দেশের নাগরিকদেরই নিজ নিজ দেশের হাইকমিশন থেকে অনাপত্তিপত্র বা এনওসি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ভারতের কলকাতার উপ-হাইকমিশন এনওসি দেওয়া বন্ধ রাখায় বেনাপোল ও বুড়িমারী দিয়ে দেশে ফেরা বন্ধ হয়ে গেছে। এই কারণে সারা ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা একমাত্র খোলাপথ আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্ট দিয়েই ফিরছেন। এতে আখাউড়া চেকপোস্টে যেমন চাপ বেড়েছে তেমনি ঝুঁকিও বেড়েছে। চেকপোস্টে থাকা হেলথ ডেস্কে দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তারা এমনটিই জানিয়েছেন।

আখাউড়া চেকপোস্টআখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সোমবার আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ৫৩ জন বাংলাদেশি ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার মধ্যে আগরতলা ইমিগ্রেশনে এসেছিলেন। বেলা ৩টার পর আগরতলা ইমিগ্রেশনে কাউকে ডুকতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের অনুরোধেই এমনটি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিকালের বিমানে আগরতলায় এসে সেখানে আটকে পড়েছেন আরও প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি। সোমবার আসা ৬৭ জন সহ আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে গত ১৫ দিনে ভারত থেকে এসেছেন ৪১৩ জন। তাদের মধ্যে ১৫ জন ভারতীয়। যারা বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মরত। আর ৩৩ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ার চারটি আবাসিক হোটেল ও বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রবিবার পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮৫ জন। বাকিদের অনেকে নিজ নিজ এলাকার সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আছেন। এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ১৫০ জন। আখাউড়া ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নূরে এ আলম বলেন, ‘ভারত ফেরা যাত্রীদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকার হাসপাতাল কিংবা সুবিধামতো স্থানে কোয়ারেন্টিনে যেতে চাচ্ছেন। আমরা তাদের সেই সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে। প্রথমত তাদের ব্যবহৃত পাসপোর্টটি রেখে দেওয়া হচ্ছে। যারা অন্যত্র কোয়ারেন্টিনে থাকবেন পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র এবং করোনা নেগেটিভ টেস্ট কপি জমা দিয়ে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে।

এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) আখাউড়া স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন পরিদর্শন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে যাত্রী প্রবেশের হার বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এ অবস্থায় ভারত ফেরত যাত্রীদের বর্তমানে আখাউড়া জেলার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ বিজয়নগর উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। ভারত থেকে ফেরা নাগরিকদের সংখ্যা যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে আশপাশের জেলায় তাদের কোরারেন্টিনে রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় নাগরিক ব্যতীত সব ধরনের বাংলাদেশি নাগরিককের ভারতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।