বাবাকে দাফনের পর এলো প্রবাসী ছেলের মৃত্যুর খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মো. হামিদ হোসেন (৬০) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে কবর দেওয়ার পর পরই খবর আসে তার প্রবাসে থাকা ছেলে সোহেল মিয়া (২৬) করোনায় মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ভোরে হামিদ হোসেন জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় সাইপ্রাসের একটি হাসপাতালে তার প্রবাসী ছেলে সোহেল মিয়া মারা যান।

মঙ্গলবার দুপুরে বাবাকে কবর দেওয়ার পর প্রবাসে থাকা ছেলের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা নাসিরনগর উপজেলার কুণ্ডা ইউনিয়নের কুণ্ডা বাজার এলাকার বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুণ্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. হামিদ হোসেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২০ আগস্ট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অন্যদিকে, ২৭ জুলাই সাইপ্রাস প্রবাসী সোহেল অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত সেখানে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে সেখানকার আরেকটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সোহেলের।

শিক্ষক হামিদ হোসেনের ভাতিজা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাচাকে কবরে রেখে বাসায় আসার পরই ফোন আসে সাইপ্রাসে আমার চাচাতো ভাই সোহেলও মারা গেছেন।’

তিনি আরও জানান, তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেল পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। সাত বছর আগে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস পাড়ি জমান সোহেল। পড়ালেখার পাশাপাশি সাইপ্রাসের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। গত বছর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশে বিয়েও করেন তিনি। বিয়ে করলেও এখনও দেশে আসা হয়নি তার। এ বছর দেশে আসার কথা থাকলেও করোনায় তার সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না।’

ঘটনা সম্পর্কে কুণ্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একসঙ্গে তাদের দুজনকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ। আমি হামিদ স্যারের সঙ্গে দুই যুগ শিক্ষকতা করেছি। তার ছেলে সোহেলও আমার ছাত্র ছিল। বাবা-ছেলের এমন করুণ মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। মহান আল্লাহ যেন তাদের বেহেস্ত নসিব করেন।’