সবকিছু লিখে নিয়ে মা-বাবাকে বের করে দিলো ছেলে

রংপুর নগরীর উত্তম বণিকপাড়া মহল্লায় বাড়িঘর ও আবাদি জমিসহ সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে সাইদুল ইসলাম। তারা যাতে ফিরে আসতে না পারে সেজন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে বসতঘর। দীর্ঘ প্রায় দু মাস ধরে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বর্তমানে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ মা-বাবা। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধ বাবাকে নির্যাতন এবং ঘরটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। স্বজন ও গ্রামবাসী অনুরোধ করলেও শোনেননি অভিযুক্ত সাইদুল। এদিকে ওই বৃদ্ধ বাবা-মা অনাহারে-অর্ধাহারে মানুষের বাড়িতে বসবাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিন নগরীর উত্তম বণিকপাড়া মহল্লায় গিয়ে ছেলের নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধ বাবা নবির হোসেন (৯০) ও মা সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে দেখা করলে ছেলের অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা দেন। খাবার বন্ধ করে দেওয়া, থাকার ঘরটি ভেঙে দেওয়াসহ সব ঘটনার কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তারা।

ভেঙে ফেলা হয়েছে বসতঘরবৃদ্ধ নবির হোসেন জানান, তিনি পৈত্রিক সূত্রে ১০-১২ বিঘা জমি পেয়েছিলেন। স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। সেই সঙ্গে জমির ফসল থেকে যা আয় হতো তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে যেতো।

তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে ছেলে সাইদুল ইসলামকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব জমিজমা-বসতবাড়ি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। দু মাস না যেতেই ছেলের বউ খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট দিতে থাকে। এ বিষয়ে ছেলের কাছে অভিযোগ করলে উল্টো আমাদের গাল দিতো। এবার রমজান শুরুর কয়েকদিন আগে ঘরের বেড়া ঠিক করার জন্য দুটি বাঁশ কাটায় সাইদুল ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্য নির্যাতন করে। আমার স্ত্রী প্রতিবাদ করতে এলে তাকে লাথি মারে। এরপর আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। যাতে ঘরে থাকতে না পারি সে জন্য ঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।’ এরপর স্বজন আর এলাকার বিভিন্ন জনের বাড়িতে অনাহারে অর্ধাহারে যাযাবর জীবন যাপন করছেন বলে জানান তিনি।

বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগমও তার ওপর নির্যাতনের কথা বলে কাঁদতে থাকেন। তিনি জানান, তাদের উপর নির্যাতন আর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা স্থানীয় মসজিদ কমিটি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে কয়েক দফা বিচার দেওয়া হলেও সেখানে ছেলে হাজির হয়নি। উল্টো তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বৃদ্ধ নবির হোসেনের তিন মেয়ে আছিয়া খাতুন, নাজমা ও বুলবুলি বেগম বলেন, ‘বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিচার চাই আমরা।’

বাড়িতে স্থানীয়রাএ ব্যাপারে ওই মহল্লার ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সাইদুল বাবা-মায়ের কুলাঙ্গার সন্তান। বৃদ্ধ মা-বাবাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটিতে তার নির্মমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ একই অভিযোগ করেন প্রতিবেশী মাহমুদ হোসেন, রেজিয়া বেগমসহ অনেকে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাইদুল ইসলামের সেঙ্গ কথা বলতে তার বাসায় কয়েক দফা গিয়েও পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তার স্ত্রী সালমা আখতার নির্যাতন করার কথা সত্য নয় বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন তদন্ত করে বৃদ্ধ বাবা-মাকে অকথ্য নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া এবং থাকার ঘরটি গুঁড়িয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।