হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা

মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য ওই সব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বড়লেখার চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরো জেলার মধ্যে বন্যায় বড়লেখা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছেন। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানান, আয়েশাবাগ চা বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চার জন আহত হয়েছেন। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় শনিবার ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ রবিবার উদ্ধার করা হয়েছে।

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনও নিমজ্জিত রয়েছে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

বড়লেখা পল্লী বিদ্যুতের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পানি এখন নেমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ২০টি বড় গাছ পড়েছে। ১৮টি স্থানে তার ছিঁড়েছে। ২২টি জায়গায় কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙেছে, কোথাও হেলে পড়েছে, আবার কোথাও পড়ে গেছে। ২৬টি মিটার ভেঙে গেছে। ১৬টি ইন্সুলেটর ভেঙেছে। আটটি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। পল্লী বিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতের কাজ করছেন। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পুরো উপজেলায় সরবরাহে সময় লাগবে।’

বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, ‘আমাদের ফায়ার সার্ভিসে পানি উঠেছিল। আজ ভোরে পানি নেমে গেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার এবং মনু নদীর চাঁদনী ঘাট পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’