তলিয়ে গেছে বাদামক্ষেত, স্বপ্নভঙ্গ কৃষকের

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীর চরে বাদাম চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলো। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যায় তাদের সেই ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পরিপক্ব হওয়ার আগেই ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বাদামের ফলন ভালো হয়নি। 

জানা গেছে, এ বছর চর বেথুরী, চর কর্নেশন, মজলিশপুর, চর দেবীপুর, ধোপাগাথি, বেতকা ও রাখালগাছিসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক বাদাম চাষ হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চরের দরিদ্র পরিবারগুলো কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো ধানের বদলে বাদাম চাষ করেন এ এলাকার চাষিরা। এগুলো মে-জুলাই মাসে উত্তোলন করা হয়।

সরেজমিন দৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায়,  স্তূপ করে রাখা বাদাম ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন নারীরা। ঘরে ঘরে চলছে বাদাম কাটা ও মাড়াই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে চরের বেলে মাটিতে তেমন একটা ফসল হতো না। ফলে এখানকার মানুষের অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। গত কয়েক বছর ধরে পলি জমে ভরাট হওয়া চরের জমিতে ব্যাপকভাবে বাদাম চাষ হচ্ছে। এতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন চাষিরা। কিন্তু এ বছর পানির নিচে ক্ষেত ডুবে থাকায় বাদামের ফলন ভালো হয়নি। প্রতি একর জমিতে ২৪ থেকে ২৫ মণ ফলন হলেও এবার অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

বাদামদৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাটের মজিদ শেখের পাড়া এলাকার কৃষক মমিন মণ্ডল জানান, তিনি চলতি বছরে ১৫ বিঘা জমতে বাদাম চাষ করেছেন। চার বিঘা জমির বাদাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

আরেক চাষি বাবু শিকদারের স্ত্রী বিলকিস খাতুন জানান, তিনি এবার ২৫ বিঘার মতো বাদামের আবাদ করেছেন। নিজের জমি ১০ বিঘা। বাকি ১৫ বিঘা লিজ নিয়েছেন। কিন্তু পদ্মায় পানি বাড়ায় ১২ বিঘার মতো বাদামক্ষেত তলিয়ে গেছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলায় বিশেষ করে দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বাদামের চাষ হয়ে থাকে। এ বছর উপজেলায় মোট ৩৭১ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষ হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে আছে ৮ হেক্টর জমির বাদাম।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে চীনাবাদাম চাষে উৎসাহিত করেছি। এ বছর ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বিঘাপ্রতি সাত-আট মণ করে বাদাম পাবেন। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩৭১ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষ করা হয়েছে। আগাম বন্যার আশঙ্কায় চাষিরা বাদাম তুলতে ব্যস্ত। অতি বর্ষণে আট হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে।’

উপজেলার কৃষকরা কী পরিমাণ সার, বীজ পেয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেকোনও কৃষক একটি প্রণোদনা পাবেন। সরিষা বা বাদাম বীজ। যারা সরিষা পাবেন তারা বাদামের বীজ পাবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব কৃষকের বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে, আমরা তাদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবো। আশা করি আগামী বছর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’