কুড়িগ্রামে ধর্মঘট প্রত্যাহার, বর্ধিত দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি

ছয় দিন পর ঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন কুড়িগ্রামের এলপিজি গ্যাস ডিলাররা। গত ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ধর্মঘট গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করেন গ্যাস ব্যবসায়ীরা। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও বিক্রি হচ্ছে বর্ধিত মূল্যে। ফলে ভোক্তাদের লাভের অংক শূন্যই থেকে যাচ্ছে।

ডিলাররা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করলে প্রতি সিলিন্ডারে তাদের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ টাকা লোকসান গুনতে হয়। আবার বর্ধিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করলে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। উভয় সংকটে পড়ে তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হন। পরে জনভোগান্তি বিবেচনায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা।

কুড়িগ্রাম শহরের বেশ কিছু পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে জানা গেছে, দোকানগুলোতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকার ১২ কেজি এলপিজির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এক হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সমপরিমাণ ওজনের এলপিজি সিলিন্ডার পাইকারি এক হাজার ৩০০ টাকা এবং খুচরা এক হাজার ৩৩০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বাধ্য হয়ে বর্ধিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন।

গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে আসা রেহানা নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে আমরা চাপে আছি। সংসারের খরচ সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছি। এর মধ্যে বাধ্য হয়ে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। উপায় নেই, রান্না তো করতে হবে। তবে সরকারের উচিত জনভোগান্তি কমাতে সব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।’

কুড়িগ্রামের এলপিজি গ্যাস ডিলার বিআর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বদরুল আহসান মামুন বলেন, ‘সরকার সিলিন্ডার ভর্তি এলপিজি গ্যাসের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কোম্পানিগুলো বেশি দামে আমাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করছে। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। আবার বেশি দামে বিক্রি করলে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আমাদের বিক্রেতাদের জরিমানা করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়ে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পাশের জেলা থেকে গ্যাস সিলিন্ডার এনে আরও বেশি দামে বিক্রি শুরু করে। সেই দায়ও আমাদের ওপর পড়ছিল। ফলে জনভোগান্তিসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। এখন গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখলেও বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

এই ডিলারের সরবরাহ করা একটি চালানপত্রে দেখা যায়, যমুনা স্পেসটেক জয়েন্ট ভেঞ্চার লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি থেকে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের ক্রয়মূল্য পড়েছে এক হাজার ২৩৪ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় ও লোড-আনলোড খরচসহ তাদের সিলিন্ডার প্রতি ক্রয়মূল্য পড়ে এক হাজার ২৭৪ টাকা। এই সিলিন্ডার তারা পাইকারি পর্যায়ে এক হাজার ৩০০ এবং খুচরা পর্যায়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

ডিলার বদরুল আহসান মামুন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের অভিযানে আমরা এই চালান দেখালেও তারা কোনও কিছু মানতে চান না। সরকার নির্ধারিত মূল্যের অজুহাতে তারা জরিমানা করেন। আমরা তো সিলিন্ডার প্রতি ২০-৩০ টাকার বেশি লাভ করছি না। কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছিলাম। এখন আবারও যদি আমাদের জরিমানা করা হয় তাহলে বিক্রি বন্ধ রাখবো। এছাড়া উপায় নেই। তবে সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করে।’

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।’

ডিলারদের গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ‘অসামঞ্জস্যতা’ নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো।’