দেড় মাস আগে বিয়ে, করতোয়ায় বিচ্ছেদ

শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে মহালয়ায় পুণ্য অর্জনের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়ার পূর্ব পাড়ে বোদেশ্বরী মন্দির দর্শনের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন নবদম্পতি হিমালয় ও বন্যা। করতোয়া নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে মন্দিরে গিয়ে করতোয়ার পানিতেই পুণ্যস্নান করে পাপমুক্তির আশা ছিল তাদের। কিন্তু নৌকাডুবির ঘটনায় তাদের সে প্রত্যাশা নদীর পানিতে ভেসে গেছে। মাঝনদীতে নৌকা উল্টে অন্য অনেকের সঙ্গে পানিতে পড়ে যান এই নবদম্পতি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের পরনের কাপড় ছুড়ে দিয়ে তীরে ওঠেন বন্যা। কিন্তু খোঁজ মেলেনি হিমালয়ের। বাকি জীবন একসঙ্গে চলার প্রতিজ্ঞাকে সংশয়ে ফেলে হিমালয় এখনও নিখোঁজ। স্বামীর প্রতীক্ষায় পানিতে চোখ ভাসাচ্ছেন বন্যা।

হিমালয়ের খোঁজে করতোয়ার তীরে অপেক্ষমাণ তার দুলাভাই গ্রি বাবু এমনটাই জানালেন। শ্যালকের খোঁজে মধ্যরাত অবধি করতোয়ার তীরে অপেক্ষা করে গিয়ে ভোরে আবারও এসেছেন করতোয়া পাড়ে। কিন্তু হিমালয়ের খোঁজ মেলেনি।

হিমালয়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি খালপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ-সারদা রানী দম্পতির ছেলে। দেড় মাস আগে হিমালয়ের বিয়ে হয় বন্যা রানীর সঙ্গে। মহালয়ার অনুষ্ঠানে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে এক নৌকায় ছিলেন তারা। বন্যা সাঁতরে তীরে উঠলেও হিমালয় ও তার মামাতো বোন আঁখি (১৬) এখনও নিখোঁজ।

হিমালয়ের খোঁজে করতোয়ার তীরে অপেক্ষমাণ দুলাভাই গ্রি বাবু (ছবি: আরিফুল ইসলাম রিগান)গ্রি বাবু জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় তার স্ত্রীর মামি ও খালা মারা গেছেন। রবিবার তাদের মরদেহ পাওয়া গেছে। পরিবারের অপর দুই নিখোঁজ সদস্যের খোঁজে তারা নদীতীরে অপেক্ষা করছেন। বাড়িতে সবাই শোকে মাতম করছেন।

এদিকে রাতের বিরতির পর সোমবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল। নদীতে তখন স্রোতের তীব্রতা। সবার চোখ ডুবুরি দলের নৌকার দিকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতীরে ভিড় বাড়ছে। উদ্ধার অভিযানের ধীরগতিতে অপেক্ষমাণ স্বজনদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। এর মধ্যে পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলামের কাছে খবর আসে, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভাটিতে দেবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। আরও ৩৫ কিলোমিটার ভাটিতে দিনাজপুরের খানসামা ফায়ার সার্ভিস দল করতোয়ার জিয়া ব্রিজের কাছে আরও এক জনের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে। তবে তখনও ওই উদ্ধারকৃত তিন জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর কিছু পরে জালিয়াপাড়া ঘাটের কাছে কবিতা রানী (৫০) নামে আরও এক নারীর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা। কবিতা রানী মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের ফুটকিবাড়ী গ্রামের হেমন্তের স্ত্রী বলে জানা গেছে।

সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ অনেকের সন্ধানে তখনও করতোয়া তীরে অপেক্ষমাণ স্বজনরা।