বিদেশগামী ছেলেকে গাড়িতে উঠিয়ে ফেরার পর বাবার মৃত্যু

অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে বড় ছেলে মহসিনকে (২৩) সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করেন শফিকুল ইসলাম(৪৬)। সে লক্ষ্যে ঢাকায় যাওয়ার গাড়িতে তুলেও দিয়েছিলেন সন্তানকে। কিন্তু আদরের সন্তানকে বাইরে পাঠিয়ে নিজে মোটেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। বাড়ি ফেরার পর গভীর রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শফিকুল।

ঘটনাটি যশোরের চৌগাছা উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ছোটকাবিলপুর গ্রামের।

শফিকুল ইসলামের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন স্থানীয় ইউপি সদস্য (৮ নম্বর ওয়ার্ড) সুমন মিয়া জানান এই ঘটনা। তিনি বলেন, ‘রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে শফিকুল ইসলামকে দাফন করা হয়েছে।’ 

ইউপি সদস্য সুমন মিয়ার ভাষ্যমতে,  ছোটকাবিলপুর গ্রামে একটি চায়ের দোকান রয়েছে শফিকুলের। তার দুই সন্তান – মহসীন ও রহিম। বড় ছেলে বিবাহিত, তারও একটি বাচ্চা রয়েছে। ছোট জন স্থানীয় একটি হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। চৌগাছার একজন শিল্পপতি শফিকুলকে একটি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন, সেই বাড়িতেই থাকতেন। অত্যন্ত গরিব মানুষ তিনি। সংসার ভালোভাবে চালাতে বড় ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেই কারণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও স্বজনদের কাছ থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা জোগাড় করে ছেলেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। 

সুমন মিয়া বলেন, ‘শনিবার রাতে ছেলেকে বাসে তুলে দিতে শফিকুল ভাইয়ের সঙ্গে আমিও ছিলাম। বাড়ি ফেরার পর দোকানে কিছুক্ষণ তার সঙ্গে কাটাই। তার হাবভাব ভালো লাগছিল না, টেনশন করছিলেন। ছেলের জন্যে তার মনের ভেতর হয়তো ওলটপালট হচ্ছিল। সন্তানদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। তাকে অনেক বোঝাই; তার মন ভালো করতে শেষ পর্যন্ত আরও দুই জনকে ডেকে তাসও খেলি। তারপর একটু ভালো বোধ করলে আমরা যার যার বাড়ি ফিরে যাই।’

তিনি আরও বলেন বলেন, ‘পরে ভাবির (শফিকুলের) কাছে জানতে পারি, রাত ১টার দিকে তিনি বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলেন। আশপাশের লোকজন আসার পর বোঝা যায়, তিনি মারা গেছেন। তারপরও মন বোঝানোর জন্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি জানান, মৃত্যুর খবরটি বিদেশগামী ছেলেকে জানানো হয়নি। 

এ বিষয়ে ধুলিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান বলেন, ‘শফিকুল স্ট্রোক করে মারা গেছেন।’