পদ্মায় মিলছে না মাছ, সংকটে জেলেরা

পদ্মায় পানি কমতে শুরু করেছে। রাত-দিন জেলেরা নদীতে পড়ে থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা। কারও জালে দুই-একটা ছোট বোয়াল, কাতল, পাঙাস ও ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু তাও পরিমাণে খুবই কম। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে তাতে নৌকা-জালের খরচও উঠছে না। এ নিয়ে চরম হতাশ হয়ে অনেকে গুটিয়ে রেখেছেন জাল। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তরমোড়, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার দুপুরে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরিঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে তারা হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের হাজিরাই উঠছে না। অনেকেই নৌকা পাড়ে রেখে জাল মেরামতের কাজ করছেন।

অন্তরমোড়ের জেলে নয়ন হালদার জানান, এবার পদ্মায় ইলিশ নেই বললেই চলে। সারারাত নদীতে জাল ফেলে মাছের অপেক্ষায় থাকতে হয়। যা মাছ জালে আসছে তা দিয়ে নৌকার খরচই উঠছে না। তাই জেলেদের মধ্যে অনেকেই মনের দুঃখে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

দৌলতদিয়ার জেলে শুকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের একটি নৌকায় মাছ ধরতে পাঁচ-ছয় জন লোক লাগে। সারাদিন বা সারারাত মাছ ধরে নৌকা, জাল ও মেশিনের ইঞ্জিনের ডিজেল খরচ মেটানো শেষে জেলেদের ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হাজিরাও হয় না। বাজারে চাল-ডালসহ দ্রব্যমূল্যের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে এ টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলছে না।’

পদ্মায় জেলেনৌকাদৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এ ইউনিয়নের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার নদীতে জেলেদের জালে খুবই কম মাছ ধরা পড়ছে। এ জন্য জেলেদের খুব দুর্দিন যাচ্ছে। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও বরাদ্দ না আসায় তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

মাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, ‘বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। তা ছাড়া নদীতে অনেক স্থানে চর পড়ে গেছে। অন্যদিকে, নদীতে জেলেরা চায়না, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। এতে মাছের বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি হচ্ছে না। জেলেদের এ বিষয়ে সচেতন করা হলেও অনেকেই তা মানছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে নদীতে মাছ কমতে থাকলে জেলেরা আর্থিক সংকটে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক জেলে হতাশার মধ্যে পড়ে গেছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কোনও সরকারি সহায়তা এলে জেলেদের মাঝে দেওয়া হবে।’