ঋণ খেলাপের অভিযোগে গ্রেফতার ১২ কৃষক জামিন পেয়েছেন

পাবনার ঈশ্বরদীতে ঋণ খেলাপের অভিযোগে চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেফতার ১২ কৃষক জামিন পেয়েছেন। রবিবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন না কারা?

জামিনপ্রাপ্ত কৃষকরা হলেন– উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামাণিকের ছেলে আলম প্রামাণিক (৫০), মনি মণ্ডলের ছেলে মাহাতাব মণ্ডল (৪৫), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু (৪০) এবং মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), মৃত সোবহান মণ্ডলের ছেলে আব্দুল গনি মণ্ডল (৫০), কামাল প্রামাণিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামাণিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬), লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)। তারা সবাই প্রান্তিক কৃষক।

খেলাপি ঋণের শীর্ষে যে ১০ ব্যাংক

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৩৭ জন আসামির মধ্যে ১২ জন কৃষককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।  ঋণখেলাপের অভিযোগে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের একটি গ্রুপকে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করেন। ঋণ খেলাপের দায়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা করেন।

হয়রানি মামলায় আক্রান্ত একাধিক কৃষক ও তাদের পরিবারের দাবি, ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ পরিশোধ করেছেন। পরিশোধের পাস বই ও জমা স্লিপও রয়েছে। অথচ সেই অর্থ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে তাদের এই হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ালো একলাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা

আদালত চত্বরে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ বলেন, ‘গত বুধবার যখন এসব কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় তখন কৃষকরা সবাই এলাকায় শীতের রাতে গাজরের ক্ষেতে কাজ করছিলেন।  যে কৃষক সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা দেশের মানুষের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন সেই কৃষককে হয়রানি মোটেও কাম্য নয়।’

মামলায় হয়রানির শিকার কৃষক পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকার কারণে আজ আমাদের স্বজনেরা আইনি সহায়তা পেলেন।’ তারা এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানান।

মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বলেন, ‘কৃষকরা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করা হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আমাদের দাফতরিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা তাদের আইনগত সহায়তা পেয়েছেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন, অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন ও অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন।