প্রকাশ্যে সড়কে নারীর ওপর হামলে পড়লেন যুবক

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রকাশ্য দিবালোকে ও জনসম্মুখে এক নারীর ওপর হামলা করেছেন এক যুবক। হামলায় আহত ওই নারী চিকিৎসা শেষে বুধবার (৫ জুলাই) থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও এখনও আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

ভুক্তভোগী নারীর নাম নুর নাহার বেগম (৩০)। তিনি মজাইডাঙা গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মজিদের স্ত্রী। অভিযুক্ত যুবকের নাম আশরাফুল ইসলাম (২৭)। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে আশরাফুলের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এরই জেরে গত ১ জুলাই মজাইডাঙা গ্রামে পাকা সড়কের পাশে গ্রামের লোকজনের সামনেই হামলা করেন আশরাফুল। এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে নুর নাহারের ওপর লাফিয়ে পড়েন পাঞ্জাবি-টুপি পরিহিত আশরাফুল। এতে নুর নাহার সড়কের ওপর পড়ে গেলে তার ওপর বসে গলা ধরে তাকে মাটিতে আছড়াতে থাকেন। উপস্থিত লোকজন আশরাফুলকে নিবৃত্ত করে নুর নাহারকে উদ্ধার করেন।

ভুক্তভোগী ও তার স্বামী আব্দুল মজিদ জানান, জমিসংক্রান্ত বিরোধে আশরাফুল তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জাল দলিল করে একটি জমি নিজের দাবি করে আসছেন তিনি। এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক করেও কোনও ফল হয়নি। পরে উভয় পক্ষ আদালতের স্মরণাপন্ন হন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু আশরাফুল ওই জমিটি দখলে নিয়ে ঘিরে রেখেছেন। গত ১ জুলাই এ নিয়ে আবারও বাকবিতণ্ডা হলে আশরাফুল প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে নুর নাহারের ওপর হামলা করেন। তাকে কিল-ঘুষি মেরে তার গলা চেপে ধরে তাকে হত্যার চেষ্টা চালান। উপস্থিত লোকজন নুর নাহারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

ভুক্তভোগী নুর নাহার বলেন, ‘আশরাফুল গ্রামবাসীর সামনে দৌড়ে এসে আমার ওপর হামলা করে। আমাকে কিলঘুষি মেরে গলা চেপে ধরে রাস্তায় আছাড় মারতে থাকে। আমরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও আসামি গ্রেফতার হয়নি। তাহলে বিচার কেমন করে পাবো?’

আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমি সেদিন ওই সময় বাড়িতে ছিলাম না। এই সুযোগে আশরাফুল আমার স্ত্রীর ওপর হামলা করছে। পরে আমার স্ত্রীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চার দিন চিকিৎসা শেষে গত ৫ তারিখ আমি নিজে বাদী হয়ে চিলমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পুলিশ মামলা নিতে দেরি করছে। আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী কায়সার, মোখলেসুর ও সুফিয়া বেগম জানান, অনেক আগে থেকে দুই পরিবারের বিরোধ চলছিল। সেদিন রাস্তায় নুর নাহারকে পেয়ে তার ওপর হামলা চালায় আশরাফুল। লোকজন থাকলেও সবাইকে এড়িয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে গিয়ে হামলা করে। এরপর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছে।

কায়সার বলেন, ‘একটা নারীর ওপর এমন করি হামলা করা খুব খারাপ হইছে। ইয়ার বিহিত হওয়া দরকার। আমি নিজে আশরাফুলকে চড়-থাপ্পর দিয়া সরে দিছি।’ ঘটনার পর মোটরসাইকেল নিয়ে আশরাফুল গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

চিলমারী থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হারেসুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি পলাতক থাকলেও তাকে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত প্রক্রিয়া ছাড়াও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।’