তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস পর নতুন তদন্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল সোমবার (৭ এপ্রিল) কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে।

তনুর ভাই রুবেল হোসেন বলেন, ‘তারা কোনও একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। হাজিরা শেষে ক্যান্টনমেন্টে আসার পর আমার বাবাকে ফোন করেছিলেন। তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বলে শুনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ দুই বছর আগে আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনও কর্মকর্তা কথা বলেছিলেন। এরপর সোমবারই নতুন কর্মকর্তার সঙ্গে পরিবারের কোনও সদস্যের কথা হয়।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত মাস আগে মামলাটির দায়িত্ব গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা হয়নি। সোমবার ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছি। এটা মামলার তদন্তের নিয়মিত কার্যক্রমের একটি অংশ। এরপর আমরা ঢাকায় ফিরে যাবো। আমাদের সঙ্গে তনুর পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার জন্য।’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত ৯ বছরে মামলার অগ্রগতি বলতে শুধুই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন। আমরা এসব নাটক আর দেখতে চাই না। খুনিদের বিচার চাই।’

এদিকে, এ হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করেও কোনও কূলকিনারা পায়নি। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পিবিআইয়ের ঢাকা সদর দফতরে হস্তান্তর করে সিআইডি। প্রায় চার বছর মামলাটি তদন্ত করেছেন পিবিআই সদর দফতরের পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমান। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন তরিকুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে খোঁজাখুঁজি করে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের অদূরে ঝোঁপের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।

২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এ ছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিন জনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে।