জানা গেছে, গণকবরের সীমানা প্রাচীর থেকে স্মৃতি অম্লান (৪২ শহীদ হিন্দু ধর্মালম্বীর নামফলক) ভেঙে গণকবরটি দখলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম আলী। কিন্তু পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে স্মৃতি অম্লানটি খানকাহ শরিফের দেয়ালে আটকে দেন।
গণকবরের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই আছে দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুস্তম আলীর তিন শতক জমি। ধীরে ধীরে তিনি সেখানে বসতি গড়ে তুলেছেন। খানকাহ শরিফের নাম দেওয়া হয়েছে শাহ সূফি হযরত তৈয়ব আলী খানকাহ শরিফ।
এ ব্যাপারে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি খোদাবক্স মণ্ডল জানান, তৈয়ব আলীর বাড়ি নাটোরে। প্রায় ১০ বছর আগে তিনি মারা গেছেন বলে শুনেছি। এই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম আলী ছিলেন তৈয়ব আলীর ভক্ত। সে কারণেই তার গুরুর নামানুসারে এই খানকাহ শরিফের নামকরণ করেছেন তিনি। আর এই গণকবরের জায়গা দখল করেই রুস্তম আলী খানকাহ শরিফ নির্মাণ করেছেন।
যুগীশো গ্রামের মাসুদ রানা জানান, রুস্তম আলীর কথিত ওই খানকাহ শরিফে প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার রাতে গানের আসর বসানো হয়। সারা রাত চলে গান। সেই সঙ্গে বসানো হয় গাঁজার হাট। ফলে রুস্তম আলীর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ গ্রামের সাধারণ মানুষ। কিন্তু তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
শহীদ বিভারণ চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে বীরেন্দ্র নাথ প্রামাণিক বলেন, শান্তি কমিটির ইউনিয়ন সমন্বয়কারী বখতিয়ারপুর গ্রামের আজিজ সরকারের উপরে আস্থা রাখতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবাসহ ৪২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে গণকবরটি (প্রায় পাঁচ শতক জমি) সরকারিভাবে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই জায়গায় দখল করে রুস্তম আলী খানকাহ শরিফ নির্মাণ করেছে।
তবে গণকবর দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে রুস্তম আলী বলেন, ‘গণকবরের পাশেই আমার জমি রয়েছে। আর গণকবরের জায়গাটি কেনা হয়েছে। তাই আমার জায়গায় যা খুশি তাই করার অধিকার রয়েছে আমার।’
কার কাছ থেকে এই জায়গা কিনেছেন জানতে চাইলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে গ্রামের হিন্দুরা। তাদের কোনও ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।’
দুর্গাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ পরিষদের কমান্ডার আবদুল গণি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা মিলে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে অতর্কিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার যুগীশো ও পালশা গ্রামে। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে থাকা শান্তি কমিটির ইউনিয়ন সমন্বয়কারী আব্দুল আজিজ সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ওই গ্রামের সব মানুষ জড়ো হয় স্থানীয় একটি বাঁশঝাড়ের নিচে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী মুসলমান ও হিন্দু ব্যক্তিদের আলাদা করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাটিতে শুইয়ে দেয়। আর মুসলমানদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে। এর কিছুক্ষণ পরেই ব্রাশফায়ার করে ওদের হত্যা করা হয়। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী চলে গেলে সেখানে ৪২ জন হিন্দুর লাশ পাওয়া যায়। সেদিন ওই বাঁশঝাড়ের নিচেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ ৪২ জনকে গণকবর দেওয়া হয়।
/বিটি/এফএস/