X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

এক পরিবারের ১৩ জন শহীদ, আজও মেলেনি স্বীকৃতি

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:০৭আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:১৪

‘আমার বাবা-মাসহ ১৩ জন ভারতের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। ওই দিন বিকালে কালীগঞ্জ বাজারে যেতেই হঠাৎ পাকিস্তানি সেনার তিন-চারটি গাড়ি এসে থামে। আমাদের সবাইকে দাঁড় করায়। তারপর গুলি করে হত্যা করে। এ সময় আমার ডান হাতে একটি গুলি লাগে। আরেকটি পিঠের ওপর দিয়ে চলে যায়। ভগবানের কৃপায় আমি সেদিন বেঁচে যাই।’

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বালাগ্রামের বাসিন্দা অমর কৃষ্ণ অধিকারী এভাবেই কথাগুলো বললেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ১৩ জন সেদিন শহীদ হয়েছেন। কিন্তু এমন বিরল ঘটনার আজও মেলেনি কোনও স্বীকৃতি।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছিল। রাজাকারসহ পাকিস্তানি সেনারা সেদিন তিন শতাধিক নিরাপরাধ মানুষকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অমর কৃষ্ণ অধিকারীর বয়স আজ ৬৯। সেদিন তিনি ছিলেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

কালের সাক্ষী অমর কৃষ্ণ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সেদিন পাকিস্তানি সেনারা শিশু ও বৃদ্ধদের মারেনি। এ কারণে আমার ছোট ভাই-বোনরা প্রাণে বেঁচে যায়। তবে শত শত মানুষকে সেদিন তারা হত্যা করেছে। সেদিন বাবার সঙ্গে ছিলাম তিন ভাই (চারু কৃষ্ণ, বট কৃষ্ণ, রাম কৃষ্ণ অধিকারী) ও চার বোন (মঞ্জু রানী, কুঞ্জ রানী, মায়া রানী ও মিনা রানী অধিকারী)।

এক পরিবারের ১৩ জন শহীদ, আজও মেলেনি স্বীকৃতি

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পর শান্তি কমিটির সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে মরদেহ মাটিচাপা দেওয়ার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। এ সময় আমি (অমর) পানি খাওয়ার ইশারা করি। তখন তারা আমাকে পানি না দিয়ে বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে বাকিদের মাটিচাপা দিয়ে চলে যায়।

পরের দিন (২৮ এপ্রিল) সেখানে গ্রামের মানুষ কবর দেখতে এসে আমাকে উদ্ধার করে। তখন বাড়িতে লোকজন না থাকায় পাশের গ্রামের এক ভগ্নিপতি ঘনেশ্যাম রায় পল্লিচিকিৎসক জামিয়ার রহমানের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভারতের কুচবিহারে পৌঁছে দেয়।

পরে বিজিবির (তৎকালীন ইপিআর) সহাতায় কুচবিহার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠি। এরপর সেখানে আমার পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা হয়। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে মরে গিয়েও মরি নাই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এক পরিবারের ১৩ জন শহীদ হয়। এর মধ্যে আমি বেঁচে আছি। দেশ স্বাধীনের ৫১ বছরেও পাইনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। সরকারের কাছে অনুরোধ, শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেলে শ্বশানে গিয়েও শান্তি পাবো।

অমর কৃষ্ণের ছোট ভাই রামকৃষ্ণ অধিকারী (৫১) জানান, দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর গেলেও আমাদের খোঁজখবর কেউ রাখেনি। একটি পরিবারের ১৩ জন মানুষ রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনার হাতে নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গিয়েছিলাম, তারপর তদন্ত টিম ঢাকা থেকে এসেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও সুখবর পাইনি।

এক পরিবারের ১৩ জন শহীদ, আজও মেলেনি স্বীকৃতি

ডিসেম্বর ও মার্চ মাস এলে মিডিয়ার লোকজন দল বেঁধে বাড়িতে এসে ছবিসহ নানা তথ্য নিয়ে যান, কিন্তু কোনও কাজই হয় না। পরিবারের পক্ষে দেশবাসীর কাছে আমার শুধু একটাই অনুরোধ, শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেলেও শ্বশানে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় কালীগঞ্জ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। সেখানে ৭৮ জন শহীদের নামের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকায় অশ্বিনী কুমার অধিকারীর নাম আছে।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মইনুয়ল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারটি সম্পর্কে আমার খুব একটা জানা নেই। আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম। তবে তাদের সহযোগিতার কোনও সুযোগ থাকলে উপজেলা পরিষদ থেকে তা করা হবে।’

/এনএআর/
সম্পর্কিত
মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অ্যাডহক কমিটি, ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন
বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন
যমুনা নদীর তীর থেকে ১১টি মর্টার শেল উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘জয়’ দাবি করলেন খামেনি
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘জয়’ দাবি করলেন খামেনি
আবু সাইদ হত্যা মামলার চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
আবু সাইদ হত্যা মামলার চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে আরও ৯ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে আরও ৯ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন এমপিরা: সালাহ উদ্দিন আহমেদ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন এমপিরা: সালাহ উদ্দিন আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
সারজিস আলমের পোস্টের পর সেই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান
সারজিস আলমের পোস্টের পর সেই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান