নদী-খাল-বিলের পানিতে কলেরার জীবাণু, বাড়ছে ডায়রিয়া

বরিশালের নদী ও খাল-বিলের পানিতে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। এ কারণে বিভাগজুড়ে এই পানি ব্যবহারে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়ছে। এছাড়াও খাল-বিলের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াও ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার আরেকটি কারণ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, টিউবওয়েল ছাড়া অন্য যেকোনও উৎসের পানি পানসহ নিত্য ব্যবহারের কাজে না লাগানোই ভালো। এদিকে, আপাতদৃষ্টিতে বিভাগে ডায়রিয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় মূল ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর গরমের সময় এপ্রিল-মে মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার কিছুটা বেড়ে যায়। এবারও বিভাগে প্রথম ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয় উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। এরপর পুরো বিভাগে ছয় জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলায়। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তারপরও সার্বিকভাবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৯ জন রোগী। গত ১ সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ৩৪৬ জন এবং গত ১ মাসে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৩৬ জন ডায়রিয়া রোগী। হাসপাতালের মূল ভবনে ডায়রিয়া রোগীদের স্থান না হওয়ায় ভবনের বাইরে খোলা স্থানে তাঁবু টাঙিয়ে তাদের চিকিৎসা চলছে।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, বরিশালের নদ-নদী ও খাল-বিলের পানিতে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। এই পানি ব্যবহারে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১৯ জন। গত এক সপ্তাহে ৭ হাজার ৭৭ জন এবং ১ মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৭শ’ ৯ জন। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৮শ’ ১২ জন।

তিনি আরও বলেন, এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয় বরগুনা জেলা থেকে। তবে বিভাগে সর্বাধিক ১১ হাজার ৭শ’ ২ জন আক্রান্ত হয়েছে ভোলায়। গত জানুয়ারি থেকে বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৫ জন, পটুয়াখালীতে ৪ জন, বরগুনায় ৩ জন এবং ভোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত একজনসহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়। তারপরও সার্বিকভাবে বরিশালের ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন এ শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

বিভাগের ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ৯০ হাজার ১১০টি আইভি স্যালাইন মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের কাজে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে  হাঁড়ি-পাতিল ধোয়া থেকে শুরু করে সকল কাজে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করবেন। এছাড়া পাতকুয়া, ইঁদারা, পুকুর, নদী, খালসহ অন্য কোনও জলাশয় বা উৎস থেকে পাওয়া পানি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াকেও ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন তিনি।