যাদের জন্য ঘর বানালেন তারা ফিরলেন লাশ হয়ে

ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন সুমন। স্বজনদের কোথাও খুঁজে না পেয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচতলায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দুই সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী বরগুনার মনোহারা গ্রামে আসছিলেন।

নিখোঁজ তিন জন হচ্ছেন– সুমনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম, বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সীমা, ছোট মেয়ে তানিশা এবং ছোট ছেলে মো. জুনায়েদ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। এক সময় গ্রামের বাড়িতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য স্ত্রী ও সন্তানদের ঢাকায় রেখে সে আগেভাগে বাড়িতে চলে এসে ঘরের কাজ শুরু করেন সুমন। ওই ঘরের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এ জন্য স্ত্রী-সন্তানদের ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতে বলেন তিনি।

আগুন লাগা লঞ্চবৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমেনা বেগম নামে এক স্বজনের সঙ্গে সুমনের স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকার সদরঘাট থেকে যাত্রীবাহী অভিযান-১০ লঞ্চের নিচতলার ডেকে ওঠেন। আগুন লাগার কিছু আগে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে থাকা আমেনা টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে বের হয়ে আগুন ও ধোঁয়ায় তিনি কিছুই দেখছিলেন না। নিজের প্রাণ রক্ষায় আমেনা নদীতে ঝাঁপ দেন। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে।

এরপর তিনি লঞ্চের বিভিন্ন জায়গা এবং নদীর তীরে অন্যদের খোঁজ করেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়টি সুমনকে ফোনে জানালে সুমন ঘটনাস্থলে চলে আসেন। সেখানে এসে নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে শুরু করে লঞ্চের বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী ও সন্তানদের সন্ধান চালান তিনি। কোনোভাবেই তাদের খোঁজ না পেয়ে সুমন যান ঝালকাঠি হাসপাতালে। যেখানে মরদেহ রাখা হয়েছে। সেখানেও তাদের সন্ধান পাননি।

সর্বশেষ সুমন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্ধান চালান। কিন্তু সন্ধান মেলেনি। এরপর থেকে হাসপাতালের পাঁচতলার এক কোনায় দাঁড়িয়ে সজোরে কাঁদছেন। সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও স্ত্রী-সন্তানদের সন্ধান চাচ্ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগ্মিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে।

আরও খবর:  লঞ্চে আগুন: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০