মায়ের সামনে ছেলেকে হত্যা প্রেমিকের

নিখোঁজের চার দিন পর বরিশালের উজিরপুরের হারতা ইউনিয়নের নাতারকান্দি গ্রামের ডোবা থেকে শিশু দীপ্ত মণ্ডলের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মায়ের সঙ্গে সেলুন দোকানের কর্মচারীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক দেখে ফেলায় দীপ্তকে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের সামনেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পরে লাশ বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় বুধবার বিকালে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মাহফুজ আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে এসব তথ্য জানায় দীপ্ত মণ্ডলের মা সীমা মণ্ডল। আদালতকে তিনি জানায়, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক দেখে ফেলায় তার সামনেই দীপ্তকে শ্বাসরোধে হত্যা করে প্রেমিক নয়ন শীল

নিহত দীপ্ত মণ্ডল (৮) হারতার কাজীবাড়ি এলাকার মিষ্টির দোকানের কর্মচারী দীপক মণ্ডলের ছেলে এবং তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তাকে হত্যার ঘটনায় একই এলাকার সেলুন দোকানি রতন বিশ্বাস, তার স্ত্রী ইভা বিশ্বাস ও রতনের দোকানের কর্মচারী নয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সীমা মণ্ডলকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। নয়ন শীল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার জগন্নাথকাঠি এলাকার অতুল চন্দ্র শীলের ছেলে।

গ্রেফতার রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ইভা বিশ্বাস

আরও পড়ুন: শিশুর গলা কেটে বস্তায় ভরে ডোবায় ফেললেন সেলুন ব্যবসায়ী 

জবানবন্দির বরাত দিয়ে উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শেদ বলেন, ‘নয়ন শীল হারতা বাজারে রতন বিশ্বাসের সেলুনে কাজ করে। এ সুযোগে দিনমজুর দীপক মণ্ডলের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৭ মে হারতা মাছ বাজারের পাশের মন্দিরে কীর্তন শুনতে যায় সীমা মণ্ডল ও ছেলে দীপ্ত মণ্ডল। কীর্তন অনুষ্ঠানে যায় নয়নও। সেখান থেকে ফিরে সেলুনে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায় সীমা ও নয়ন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের দেখে ফেলে দীপ্ত। ছেলে বিষয়টি বাবাকে বলে দেবে এই ভয়ে সীমার সামনে দীপ্তকে ঘাড় ভেঙে ও গলা টিপে হত্যা করে নয়ন। এরপর বাড়িতে গিয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়েছে বলে জানায় সীমা।’

ওসি আরও বলেন, ‘৩০ মে গভীর রাতে নয়ন সেলুনে পড়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছিল। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে ফেলে। তখন তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দীপ্তকে হত্যার কথা স্বীকার করে। সেলুন মালিক রতন ও তার স্ত্রী লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত বলেও জানায়। রতনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বস্তাবন্দি অবস্থায় সন্ধ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় দীপ্তর মা জড়িত থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের চোখের সামনে ছেলেকে হত্যার বর্ণনা দেয় সীমা। এ ঘটনায় দীপ্ত মণ্ডলের বাবা বাদী হয়ে স্ত্রী, স্ত্রীর প্রেমিক নয়নসহ চার জনের বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। লাশ গুমে সহায়তা করায় সেলুন মালিক রতন ও তার স্ত্রী ইভাকে গ্রেফতার করা হয়। চার জনই হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’