ঘরে মিললো স্বর্ণপদকজয়ী সাংস্কৃতিক কর্মীর লাশ

বরিশালে শামসুন নাহার নিপা (২৫) নামে এক সাংস্কৃতিক কর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে নগরীর উত্তর মল্লিক রোডের বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিপা ওই এলাকার মৃত ফজলুল করিমের মেয়ে। তিনি উত্তর মল্লিক রোডের বাসায় বোন ডালিয়ার সঙ্গে বসবাস করতেন। নিপা নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি উদীচী ও বরিশাল নাটক-এর সদস্য ছিলেন। উদীচীতে নিয়মিত আবৃত্তি করতেন।

নিপার বোন ডালিয়া বলেন, ‌‘প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতে খাবার খয়ে যে যার রুমে চলে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে আপাকে ডাকতে গিয়ে দরজা বন্ধ পাই। এরপর ডাকাডাকি ও দরজায় আঘাত করি। কিন্তু কোনও সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি, ঘরের আড়ার সঙ্গে লাশ ঝুলছে। এরপর থানায় খবর দিই।’

তিনি জানান, গত ২৪ জুলাই নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন নিপা। সেখানে লেখেন, ‘একটা ছেলে আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে আবার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করছে। কোনও মানুষই মরতে চায় না। তারপরেও ঠিক কতটা যন্ত্রণায় থাকলে এমন কাজ করে যে পরিস্থিতিতে না পরে সে বুঝবে না। পোস্ট কেন করছে ঠিক জানি না, হয়তো তখনো তার বাঁচার ইচ্ছেটা ছিল, হয়তো চেয়েছিল তার যন্ত্রণা কেউ বুঝুক। উনি বেঁচে গেছেন। অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলেছেন। স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছেন। তবে আমার মনে হয় উনি মরে গেলেই আসলে বেঁচে যেতেন। না তার মানে আমি সবাইকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিচ্ছি না। আমরা মানুষ চলে গেলে আফসোস করতে পারি, বেঁচে থাকার জন্য মোটিভেট করতে পারি কিন্তু সেই মানুষটার যন্ত্রণা লাঘব করে শান্তিতে বাঁচার পথটুকু বলতে পারি না। উনাকে যারা বাঁচিয়েছে তারা বড় জোর একসপ্তাহ পাশে থেকে সাপোর্ট করবে। ব্যস্ত দুনিয়ায় সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। উনি আবার যন্ত্রণায় ভুগবে, আবার আত্মহননের পথ খুঁজবে। এর শেষ কোথায়, কেন মানুষ অন্য মানুষের বাঁচার আকুতি ভুলে আত্মহনন কেন করে সেটার কারণ খুঁজে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না?’

ডালিয়া বলেন, ‘সর্বশেষ ২৫ জুলাই নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ৫৯টি ছবি পোস্ট করেন। কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করলেন কিছুই বুঝতে পারছি না।’

নিপার ফেসবুকে দেখা গেছে, ১১ ঘণ্টা আগে সবশেষ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন ‘সব প্রস্থান বিদায় নয়’।

বরিশাল উদীচীর সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন মেধাবীর নাম নিপা। সে বেশ কয়েকবার তার মেধার পরিচয়ও রেখেছে। এ জন্য তাকে জিয়াউল হক স্বর্ণপদক-২০২২ দেওয়া হয়।’

কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকলিমা বেগম জানান, ঘরের আড়ার সঙ্গে লাশ ঝুলছিল। নিপা তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে গলায় ফাঁস দেওয়ায় সেখানে কালো দাগ রয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।