মা হওয়ার পরদিন হারালেন বাবা, পরীক্ষা দিচ্ছেন আয়শা

মা হওয়ার আনন্দ ও বাবাকে হারানোর বেদনা নিয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার পরীক্ষার্থী আয়শা খানম। তিনি উপজেলার পূর্ব পয়সা গ্রামের আনিস বখতিয়ারের মেয়ে এবং বাগধা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সরকারি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে  ছিল তার বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা। 

আয়শার স্বামী কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের বীর বিক্রম ফায়েদুজ্জামান শেখের ছেলে রাকিবুল ইসলাম। পেশায় ফল ব্যবসায়ী রাকিবুল বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে এক বছর তিন মাস আগে। বিয়ের পর স্ত্রী সংসার পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেরদিন ৫ নভেম্বর আমাদের কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসে। তবে ঠিকমতো আনন্দ ভাগ করে নিতে পারিনি। কারণ ৬ নভেম্বর খবর আসে শ্বশুর আনিস বখতিয়ার মারা গেছেন। এতে করে আমার স্ত্রী বাবা হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়েন। তখন তাকে সবাই পরীক্ষা না দেওয়ার কথা বলেন। তবে আয়শার কথা- বছর তো আর ফিরে আসবে না। যত কষ্টই হোক তিনি পরীক্ষা দেবেন। তার মনের শক্তি দেখে আমি আর তাকে মানা করিনি। খালি বলেছি বাবার কথা মনে পড়লে মেয়ের মুখের দিকে তাকাবে।  

এদিকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে আয়শা বলেন, পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মধ্যেই নিজেকে শক্ত রেখে পরীক্ষা দিচ্ছি। তবে সমস্যা যতই হোক, তা এক সময় কেটে যাবে। তবে এ বছর আর পরীক্ষা দেওয়ার সময় আর পাবো না। তিনি সবার কাছে বাবা ও সন্তানের জন্য দোয়অ চেয়েছেন। 

কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহম্মদ আলম ওই পরীক্ষার্থীর বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সমাজে হার না মানা মনোবলের এমন মেয়ের নজির খুবই কম। মেয়েরা অনেকেই বিয়ের পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। তবে এই শিক্ষার্থী লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার একদিন পরে বাবার মৃত্যুও তাকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। সে অদম্য এক নারী।