বরিশালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমানে সমান 

পরিবারের হাল ধরতে শিশুদের খেলনা ফেরি করে বিক্রি শুরু করেছিলেন। খেলনা সাধারণ দরিদ্র পরিবারের শিশুরা তেমন একটা ব্যবহার করে না। শিশুরা কিনতে চাইলেও তাদের পিতামাতা কিনে দেন না। তারপরও যা বিক্রি হতো তা দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে কিছুদিন চলার পর আয় বাড়াতে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে দিবস ও উৎসবকেন্দ্রিক বিভিন্ন মালামাল বিক্রি শুরু করেন।

এতে সফলতা আসতে থাকে ঢাকার বাসিন্দা জুয়েল খানের। একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস থেকে শুরু করে বিজয় দিবস এবং বিশ্বকাপ ফুটবল ও ক্রিকেটসহ যে সব ইভেন্ট মানুষের কাছে বেশি প্রাধান্য পায় ওই দিবসের লোগো থেকে শুরু বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। তবে জুয়েলের ভাষ্যমতে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় বিশ্বকাপ ফুটবল ও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। এক মাসের অধিক সময় ধরে চলে পতাকা বিক্রি। এরপর খেলা শেষ হলে চ্যাম্পিয়ন দলের পতাকা আরও কিছুদিন বিক্রি করেন। 

জুয়েল বলেন, বর্তমানে ফুটবল বিশ্বকাপে সবাই মশগুল। অংশগ্রহণ না থাকলেও বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলসহ ২০টি দেশের পতাকা বিক্রি হচ্ছে। বাঁশের সঙ্গে পতাকা ঝুলিয়ে গত সাত দিন ধরে ঘুরে ফিরছেন বরিশাল নগরীতে। ঢাকা থেকে পাইকারি দরে পতাকা কিনে তা বিক্রি করছেন।

প্রতিদিন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা কিনছেন সমর্থকরা। গড়ে এ দুই দেশের পতাকা প্রতিদিন সমান সংখ্যক বিক্রি করছেন বলে জানান জুয়েল। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করছেন তিনি। পতাকার সাইজের ওপর দাম নির্ভর করে। তবে শখের বশে কেনা পতাকা নিয়ে সমর্থকরা খুব বেশি দরদাম করেন না বলে জানান তিনি। 

জুয়েল বলেন, তবে মাঝে মধ্যে বিব্রতকর অবস্থাতেও পড়তে হয়। বাঁশের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পতাকা বাঁধা। আর্জেন্টিনার সমর্থক পতাকা কিনলে তিনি অনুরোধ করেন তার পতাকা উপরে বাঁধার জন্য। আবার ব্রাজিলের সমর্থকরাও একই আবদার করেন। যে সময় আবদার করে তার আবদার রক্ষা করা হয়। তবে সবার উপরে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ওই দুই পতাকার সঙ্গে জাতীয় পতাকার বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয় বলে জানান জুয়েল।

এসময় নিজে কোন দলে সমর্থক জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ‘আসলে আমার কোনও দল নাই। আর তা যদি বলি তাহলে আমার সবধরনের পতাকা বিক্রি হবে না। এ কারণে আমি কোনও দলের সমর্থনের বিষয়টি বলি না। আপনারা পতাকা কিনলে আমার পরিবার ভালোভাবে খেয়ে বাঁচতে পারবে। এতে করে আমার বেচা বিক্রিও ভালো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

আলাপের মধ্যেই এক ক্রেতা এসে জার্মানির পতাকা কেনেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা রেখে জার্মানি কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জার্মানির খেলোয়াড়ের খেলার ছন্দ আছে। তাদের লং পাসে খেলা অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া সবার থেকে একটু ভিন্নতা আনতেও তিনি জার্মানিকে সমর্থন করেন বলে জানান।   

এদিকে বিশ্বকাপের উদ্বোধন উপলক্ষে নগরময় মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা করেছেন ব্রাজিল সমর্থকরা। বিশ্বকাপের গানের সঙ্গে চলে সমর্থকদের হাতে থাকা ভুভুজেলা বাঁশির হুইসেল। ব্রাজিলের পতাকার সঙ্গে শোভা যায় বাংলাদেশের পতাকাও। ব্রাজিল সমর্থকদের আশা আগামীতে বাংলাদেশও বিশ্বকাপে অংশ নেবে। তখন ক্রিকেটের মতো তারা শুধুমাত্র দেশের পতাকা নিয়ে উন্মাদনায় মেতে উঠবেন।