মিলন হত্যার ৭ বছর, এখনও বিচারের আশায় দিন গুনছেন মা

ডাকাত সন্দেহে পুলিশের উপস্থিতিতেই গণপিটুনিতে নিহত কিশোর মিলননোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাসছুদ্দিন মিলন হত্যার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ওই হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হয়নি বিচার। তদন্তেই আটকে আছে এই হত্যা মামলার কার্যক্রম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এদিকে, পুত্র হত্যার বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে এ বছরের মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন মিলনের বাবা। আর পুত্রহারা মা এখনও বিচারের অপেক্ষায় দিন ‍গুণছেন।
মিলন হত্যা মামলার এজাহার ও স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়নের বিক্ষুদ্ধ লোকজন ২০১১ সালের ২৭ জুলাই ছয় ডাকাতকে পিটিয়ে হত্যা করে। কিশোর মিলন ওইদিন সকালে চর ফকিরা গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা ফিরছিলেন। পথে চর কাঁকড়া একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একদল লোক তাকে ডাকাত সন্দেহে আটক করে। তবে সে ডাকাত নয়— এটা নিশ্চিত হয়ে তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। পথে টেকের বাজারে আসলে পুলিশের উপস্থিতিতেই উত্তেজিত জনতা মিলনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এর কয়েকদিন পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা সাড়া ফেলে। এ ঘটনায় মিলনের মা কোহিনুর বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ভিডিও প্রকাশের পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য চার পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ওই ভিডিও থেকেই গণপিটুনীতে অংশ নেওয়া ২৭ জনকে শনাক্ত করা হয়। ওই ২৭ জন ও চার পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তবে অভিযুক্ত পুলিশ ইনস্পেক্টর রফিক উল্লাহ, এসআই আকরাম শেখ, কনস্টেবল হেমরঞ্জন চাকমা ও আবদুর রহিম বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহাল তবিয়তে কর্মরত রয়েছেন। আর বাকি ২৭ জনের সবাইও রয়েছেন জামিনে।
গত বছর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-ডিবি) আতাউর রহমান ভূঁইয়া ভিডিও থেকে শনাক্ত হওয়া ২৭ আসামি ও চার পুলিশ সদস্যের সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী মিলনের মা কোহিনুর বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুর শোক আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ওইসময় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা মামলা নিষ্পত্তি করার শর্তে মেজ ছেলে সালাহউদ্দিনকে পুলিশে চাকরি ও ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে মিলনের বাবা গিয়াস উদ্দিনকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু পুলিশ কথা রাখেনি। বরং বিদেশ থেকে আসার পর মিলনের বাবা বেকার হয়ে পড়েন।’
মিলনের মা আরও বলেন, ‘আমার স্বামী বিচার পাওয়ার আশায় দিন গুণতে গুণতে এ বছরের মার্চে মারাই গেছেন। এখন আমার ছেলে হত্যার বিচার হলেই কেবল মনে একটু সান্ত্বনা পেতাম।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী সিআইডি জোনের এএসপি জালাল আহমেদ দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় তার সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফুটেজ দেখে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে।’ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী কল্পনা রানী মজুমদার বলেন, ‘আশা করছি সিআইডি শিগগিরই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে এবং বাদী ন্যায় বিচার পাবে।’
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ টি এম মহিব উল্লাহ্ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই মামলায় পুলিশ পাঁচ বছর ধরে তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করতে পারেনি। গত বছর তারা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেননি। তদন্তের দায়িত্ব নতুন করে দিয়েছেন সিআইডিকে। আমরা আশাবাদী, সিআইডি অল্প সময়ের মধ্যেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে।’

আরও পড়ুন-

রাঙামাটির ৬ আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ১৪শ’ মানুষ

কোটালীপাড়ায় স্কুলের শহীদ মিনার ভাঙচুর (ভিডিও)

লক্ষ্মীপুরে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, ভেসে গেছে মাছের ঘের

/টিআর/