এখনও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পাহাড়িরা

আদিবাসী জনগোষ্ঠী

আজ (বুধবার) বিশ্ব আদিবাসী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের 'আদিবাসীরা' সাড়ম্বরে দিবসটি পালন করে। তবে বাংলাদেশের আদিবাসীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পরও এখনও শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে। এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। সম্প্রতি রাঙামাটিতে লংগদু পাহাড়ি তিন গ্রামে আগুন লাগানো, লুটপাটের ঘটনায় আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পাহাড়িরা। বিশ্ব আদিবাসী দিবসে তাইতো তারা তাদের জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছে।

রবি মোহন চাকমা নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘কোথাও কোনও গণ্ডগোল হলেই ছড়িয়ে পড়ে যে আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরিস্থিত হঠাৎ করে এমন খারাপ হয়ে শুধু আদিবাসীরাই নয়, বাঙালিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পরিস্থিত যখন স্বাভাবিক থাকে তখন পাহাড়ি-বাঙালি সবাই ভাই ভাই থাকি। পরিবেশ এটাই হওয়া উচিত।’

adibasi-dibos

শান্তি প্রিয় চাকমা নামের আরেকজন বলেন,‘কোনও শান্তি নাই, কোনও নিরাপত্তা নাই আমাদের। কোনও এলাকায় যদি কোনও বাঙালির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সেই ঘটনাটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় হামলার শিকার হন আদিবাসীরা। সাম্প্রদায়িক মন ও মানসিকতার কারণে এখনও আদিবাসীরা নিরাপদ নয়।’

একমাসেও শুরু হয়নি লংগদুর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ফাইল ছবি

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা আদিবাসী ফোরামের সভাপতিপ্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি লংগদুর ঘটনায় আদিবাসীরা উদ্বিগ্ন। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি ঠিক করে দিতে সরকারে পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি, আরও বড় রকমের সহায়তা দিলে মনে হয় তারা কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।’

লংগদুতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর

তিন পার্বত্য জেলার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক টুকু তালুকদার বলেন, ‘সরকারের কাছে এখনও আদিবাসীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এক দশক ধরে রাষ্ট্র ৩০ লাখ আদিবাসীর হিসাব দিয়ে আসছে। সেই হিসেবে আদিবাসী জনসংখ্যার অর্ধেক ১৫ লাখ নারী। গত ৫ বছরে হত্যা,ধর্ষণসহ নানা সহিংসতার শিকার প্রান্তিক নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা ৩৬৪টি। আর এসব ঘটনার ৮৫ শতাংশ ঘটছে অ-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর।’

আদিবাসী এক শিশু

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সুনীল কান্তি দে বলেন, ‘লংগদুর ঘটনা আমাদের সবার জন্য দুঃখজনক বিষয়। যে বা যারা এই ঘটনা ঘটার জন্য কলকাঠি নেড়েছে তারা কখনও পাহাড়ি ও বাঙালির বন্ধু হতে পারে না। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তা উভয় পক্ষকে একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। আগের মতো পরিবেশ তৈরি করার জন্য।’

বাজারে আদিবাসী নারীরা বেচা-কেনা করছে

বাংলাদেশ মনবাধিকার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘লংগদু যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে বিশ্বাসের যে দেয়াল ছিল সেখানে আজ ফাটল ধরেছে। লংগদুতে পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক ছিল। এই ঘটনার কারণে সেখানে উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। কিছু মানুষের জন্য এখন ঘটনা ঘটলো। আবার কত সময় লাগে তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস ফিরে আসতে তাও কারো জানা নেই।’

আদিবাসী এক নারী

রাঙামাটি সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আদিবাসীরা তথা সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের আরও অধিকহারে এগিয়ে আসা উচিত। কাউকে অনিরাপদ রেখে সে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীন দেশের মর্যাদা থাকে না। যারা আদিবাসী তাদের অধিকার নিশ্চিত করেই তবে গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করতে পারে। এদেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সরকার এখনও মেনে নেয়নি। কবে এই দাবি মেনে নেবে তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আদিবাসীরা চায় তারাও এদেশে সম্পূর্ণ নিরাপদে বসবাস যেন করতে পারে।’ লংগদুর মতো আর যেন কোনও ঘটনা না ঘটে সেজন্য সরকারের কাছে দাবিও জানান।

 /এসটি/