‘দেড় লাখ টাকায় মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল’

দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কুলসুমী। রবিবার (০১ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন তিনি।

কুলসুমী লোহাগাড়া উপজেলার গোরস্তান মাঝের পাড়ার আহাম্মদ মিয়ার বাড়ির আনু মিয়ার মেয়ে। ২০০৬ সালে কোহিনুর আক্তার নামে এক পোশাককর্মী হত্যায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার হয়ে মিনু আক্তার দুই বছর নয় মাস ১০ দিন কারাভোগ করেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মিনু।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসামি না হয়েও মিনুকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় কুলসুমী ও তার সহযোগী মর্জিনা আক্তারকে গ্রেফতারের পর দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হয়। আদালতে কুলসুমী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, জবানবন্দিতে কুলসুমী জানান দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে তার পরিবর্তে মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। শাহাদাত হোসেন নুর আলম কাওয়াল নামে দুই ব্যক্তি মিনুকে ঠিক করে দিয়েছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে কুলসুমী ও তার সহযোগী মর্জিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকাশ মাহমুদ ফরিদ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই দিন বিকালে তাদের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের ভার্চুয়াল আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর রহমতগঞ্জের একটি বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তার পারভীনকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন কুলসুম আক্তার। ওই ঘটনায় করা অপমৃত্যু মামলার তদন্ত শেষে আদালতে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম আসামি কুলসুম আক্তারকে পারভীন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। 

ওই সাজা পরোয়ানায় কুলসুম আক্তারের পরিবর্তে মিনু আক্তার ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। মিনু দুই বছর নয় মাস ১০ দিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। এরপর বিষয়টি তার পরিবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নজরে আনলে জামিনে মুক্তি পান। গত ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ লিংক রোডে দুর্ঘটনায় মিনু নিহত হন। মিনু নিহতের ঘটনাকে রহস্যজনক দাবি করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, মিনুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। মাত্র ১৩ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বাসা থেকে চার কিলোমিটার দূরে রাস্তায় মিনু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, নাকি অন্য কেউ মিনুকে হত্যা করেছে? এটি তদন্ত হওয়া উচিত। পরে এ ঘটনায় বায়েজিদ থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলাটি তদন্তাধীন।