কারও চোখ প্রকৃতির রূপে, কারও ক্ষতি পোষাতে

মানুষের চলাচলই যেখানে থমকে গেছে সেখানে পর্যটন খাতে স্থবিরতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। কোথায় আঘাত হানেনি করোনা? বড় কারখানায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলা যন্ত্র থেকে শুরু করে রিকশার প্যাডেলেও পড়েছে এ ভাইরাসের প্রভাব। এখনও কেটে যায়নি, তবে জীবন-জীবিকার তাগিদে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ১৩৯ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থেকে খুলে দিলে সারাদেশের মতো রাঙামাটির পাহাড়ি অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে।

প্রথমদিন রাঙামাটির পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, পুলিশের পলওয়েল পার্ক, সাজেক ভ্যালিসহ বিভিন্ন স্পটে খুব একটা দেখা মেলেনি পর্যটকের। তবে দ্বিতীয়দিন শুক্রবার (২০ আগস্ট) এ অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশানুযায়ী না হলেও পর্যটক আসতে শুরু করায় খুশি তারা। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে এবং দীর্ঘ বন্ধের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা খাত সংশ্লিষ্টদের।

পর্যটকদের জন্য এ অঞ্চলের ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালি ও হ্রদ পর্যটকদের বেশি পছন্দ। দীর্ঘদিন পর ভ্রমণে বের হয়ে পর্যটকরাও জানিয়েছেন উচ্ছ্বাসের কথা। এদিকে দীর্ঘদিন পর পর্যটক আসতে শুরু করায় ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন হোটেল ব্যবসায়ী ও বোট চালকরা।

পর্যটক আসতে শুরু করায় খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা

সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে পর্যটন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই সময় বেশিরভাগ পর্যটক দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করেন। সাধারণত শীত মৌসুম হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ সময় পর্যটকের ভিড় বাড়ে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাঙামাটিতে ঘুরতে এসেছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন, আবার অনেককে বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে ঘুরতে দেখা গেছে। সব পর্যটকই জানালেন সন্তুষ্টির কথা। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতে বললেও অনেকে তা মানছেন না। প্রবেশ পথে মাস্ক থাকলেও কিছুক্ষণ পর উধাও হয়ে হচ্ছে। মাস্ক না রাখতে দিচ্ছেন নানা অজুহাত।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মাফিয়া আক্তার বলেন, ‘এখানকার প্রকৃতি দেখেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কারও মন যদি খারাপ থাকে, ভালো না হয়ে পারেই না। চারদিকে সবুজ, স্বচ্ছ হ্রদের পানি, তার ওপর ঝুলন্ত সেতু। এক কথায় অসাধারণ।’

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ঘুরতে এসেছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্দি জীবনযাপনের পর কিছুটা সময় মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাঙামাটি আসা।’

মো. ফারুক উদ্দিন জানান, করোনার কারণে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকায় তারাও ঘরের বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে পড়েছে। তাই সবাইকে নিয়ে পাহাড় দেখতে আসা। তিনি এর আগেও কয়েকবার এসেছেন, তাও ভালো লাগে বলে জানান।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আশিক ও টুম্পা দম্পতি বলেন, ‘রাঙামাটির অপার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে আছি। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ, তার বিশাল এক নিদর্শন রাঙামাটি। এক কথায় আমরা মুগ্ধ। দেশের ভেতরে এত সুন্দর জায়গা আছে, না আসলে জানতামই না।’

ঘুরতে এসে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকে

মাস্ক ছাড়া ঘুরছে কেন—পর্যটক মো. ইকবালের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘ছবি তোলার জন্য মাস্ক পরছি না। কিন্তু মাস্ক সঙ্গেই আছে। সমাগম বেশি হলেই মাস্ক পরবো।’

পর্যটন বোট ঘাটের ইজারাদার রহমত আলী জানান, দীর্ঘদিন পর্যটক না আসায় এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা কর্মহীন ছিল এবং মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। এখন পর্যটক আসায় বোটচালক ও মালিক সবাই আশায় বুক বাঁধছেন। প্রথমদিনের তুলনায় আজ (শুক্রবার) বন্ধের দিনে লোক সমাগম কিছুটা বেড়েছে।

দীর্ঘদিন পর ভ্রমণে বের হয়ে খুশি পর্যটকরা

রাঙামাটি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটির প্রকৃতি দেখার মতো হয় এবং দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য থাকায় প্রকৃতি আরও বেশি সুন্দর হয়েছে। করোনার সময় সব কর্মী ছুটি দেওয়া হয়েছিল পর্যটক না থাকায়। প্রতিটি হোটেলে আবারও সব কর্মী কাজ যোগ দিয়েছে। আমরা আগত পর্যটকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি, দীর্ঘ বন্ধ থাকায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে পারবো।’