বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় ক্যানসারের কাছে হেরে গেলেন ফাহমিদা

ভালোবাসা জয় করে ক্যানসারের কাছে হেরে গেলেন ফাহমিদা কামাল। হাসপাতালের বেডে বিয়ে করার ১৩ দিনের মাথায় মারা গেলেন তিনি। সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে ৯ মার্চ একই হাসপাতালের বেডে দীর্ঘদিনের প্রেমিক মাহমুদুল হাসানকে বিয়ে করেছিলেন ফাহমিদা। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফাহমিদার মামা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকী। 

ফাহমিদা কামাল (২৫) চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়া এলাকার ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন ও শিউলি আক্তারের সন্তান। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন ফাহমিদা। তিনি আইইউবি থেকে এমবিএ করেছেন। তার স্বামী মাহমুদুল হাসান (৩০) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল থেকে ফাহমিদার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়া এলাকার বাসায়। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বামী, স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি ফাহমিদাকে অনেক ভালোবাসি। এজন্য জীবনসঙ্গী করেছিলাম। চেয়েছিলাম ভালোবাসা দিয়ে মরণব্যাধি ক্যানসারকে জয়ী করবো। কিন্তু পারলাম না। আমাকে একা করে চলে গেলো। এত অল্প সময়ের মধ্যে তাকে হারাতে হবে ভাবিনি। তার আরও বাঁচার স্বপ্ন ছিল।’

ফাহমিদার পরিবার জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ফাহমিদা ও মাহমুদুলের পরিচয়। একসময় প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান দুজন। পরে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেখানে ব্যাঘাত ঘটায় মরণব্যাধি ক্যানসার। সবকিছু জেনেও ফাহমিদাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদুল। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর পাশে ছিলেন। খাবার ও ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছেন মাহমুদুল।

আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্ত প্রেমিকাকে হাসপাতালে বিয়ে

মামা সাইফুদ্দিন সাকী বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে ফাহমিদা উৎফুল্ল ছিল। সবসময় হাসি-খুশি থাকতো। বলেছিল আরও কয়েকটি দিন বাঁচতে চাই। আমাদের বারবার বলেছে, আমি আরও বাঁচতে চাই। আরও কয়েকটি দিন পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে চাই।’

তিনি বলেন, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ফাহমিদার রেকটাম ক্যানসার ধরা পড়ে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসার পর সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। গত ৫ মার্চ টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বেনাপোল পর্যন্ত আনা হয়। এরপর সীমান্ত থেকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে এনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ৯ মার্চ ফাহমিদাকে বিয়ে করে মাহমুদুল। এরমধ্যে কিছুটা সুস্থ অনুভব করায় ১৪ মার্চ রাতে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়। ওই রাতে আবারও অসুস্থবোধ করলে ১৫ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডা. সাজ্জাদ বিন ইউসুফের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এরই মধ্যে সোমবার সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘রবিবার বিকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফাহমিদাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সকালে আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়েছে। একই দিন বাদ আসর দক্ষিণ বাকলিয়ার আব্দুস সালাম মাতবরবাড়ি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে ফাহমিদাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’