চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন জেলার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নতুন রোগী। নগরীর পাশাপাশি উপজেলার ১৫টি সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার (৮ এপ্রিল) নগরী ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন ২৫৭ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে উপজেলার ১৫টি হাসপাতালে ১৪০, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৬৩, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩৭, চমেক হাসপাতালে ১০ ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সাত জন রোগী ভর্তি আছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার হাসপাতালগুলোতে শনিবার ১৪০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। বাকিরা জেলার নগরীর। গত সাত দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৯ জন। গত এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৯৩ জন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘এপ্রিল-মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করে প্রস্তুত রাখতে হবে।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এজন্য প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিলে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে যাবে।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, ‘আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৫টি উপজেলায় ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে মজুত রাখা হয়েছে ডায়রিয়ার যাবতীয় ওষুধপত্র।’

এদিকে, ওয়াসার পানির কারণে নগরীতে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পানির নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘পানিবাহিত রোগের কারণে ডায়রিয়া বাড়ছে কিনা আমরা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখছি। ওয়াসার ২৪০টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে জরুরি মুহূর্তে আরও বেশি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়নি।’

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের চারতলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ৪০টি বেড রোগীতে পরিপূর্ণ। এমনকি নিচতলার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১৩টি বেডে রোগী ভর্তি। কেবিনেও আছে ২০ জন রোগী। হাসপাতালের চারতলার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে ভর্তি আছে দুই বছর বয়সী আরিফুল হক।

আরিফুল হকের বাবা মো. জানে আলম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি নগরীর হালিশহর এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে আরিফুল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। মা ও শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের দেখানোর পর তারা ভর্তি করে দেন। এখন আগের চেয়ে আরিফুল কিছুটা সুস্থ।’

হাসপাতালের ৮ নম্বর বেডে ভর্তি আছে তানজিনা ইসলাম নামে আট মাস বয়সী এক শিশু। শুক্রবার বিকালে তাকে ভর্তি করা হয়। এখনও সে অসুস্থ।

মা ও শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক চিকিৎসক আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত ৬৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালের চারতলায় ৪০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ড এবং নিচের ১৩ ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। বাকিরা কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’র সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন ৩৭ জন। গত পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর রমজানে ডায়রিয়া রোগী বাড়ে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রোগীর চাপ বেশি।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক আবদুর রউফ বলেন, ‘হাসপাতালে সাত জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। তাদেরকে হাসপাতালের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক অং সুই প্রু মারমা বলেন, ‘হাসপাতালে ১০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। সবাই সুস্থ আছেন।’