‘ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছি, খড়ের জন্য কাটছি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হাওরাঞ্চলে পানিতে ডুবে থাকা ধান পচতে শুরু করেছে। এখন পচা ধান কাটছেন কৃষকরা। এসব ধান গাছ রোদে শুকিয়ে গোখাদ্যের জোগান দেবেন তারা। 

হাওরের পাড় ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে নাসিরনগর উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর ও বালিয়াজুরি বিলের অন্তত সাড়ে ৩০০ হেক্টর জমির আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে হাওরের পানি অপরিবর্তিত থাকায় ধানে পচন ধরেছে। বছরের একমাত্র ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় হালের গরুগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য গোখাদ্যের জোগান দিতে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

নাসিরনগর সদর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার বাসিন্দা অজয় ঋষি বলেন, ‘বানিয়াজুরি বিলে আমার আট কানি (২৪০ শতাংশ) ধানের জমি। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জমির সব ধান তলিয়ে গেছে। এখন পানি না কমায় আধাপাকা ধানগুলো পচতে শুরু করেছে। নিজের খাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি, গরুর খড়ের জন্য পচা ধানগুলো কেটে বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এক সপ্তাহ ধরে হাওরের পানি অপরিবর্তিত থাকায় ধানে পচন ধরেছে

একই এলাকার কৃষক মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘নয় কানি (২৭০ শতাংশ) জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এখন হাওরে যাই না। ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ পচা ধান কোনও কাজে লাগবে না।’

হাওরের পরিস্থিতি দেখতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সালেম ও তমারানী দেবকে হাওর পাড়ে ঘুরতে দেখা গেছে। তারা জানান, তাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধান পরিপক্ক হলে যেন কেটে ফেলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর তাদের বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মেহেদী হাসান খান শাওন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হবে।’

পচা ধান কাটছেন কৃষকরা

হাওরের ধান পচে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘পচে যাওয়া ধান কাজে আসবে না। গবাদিপশুর খাবারের জন্য খড় কাজে লাগবে। এজন্য পচা ধান কাটছেন কৃষকরা। আমরাও কৃষকদের ধান কাটতে বলেছি।’

চলতি বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে এক লাখ ১১ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর হাওর অঞ্চলে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ ভাগ ফসল কাটা হয়েছে। বাকি ধান পানিতে ডুবে গেছে।