সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের জন্য মালিকপক্ষ দায়ী

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিকপক্ষের অবহেলা ছিল। এ দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (৬ জুলাই) বিকালে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। গত ৪ জুন রাতে দুর্ঘটনার পর ৫ জুন এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত শেষে আমরা বুধবার বিকাল ৪টায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বিএম কনটেইনার ডিপোতে কেন আগুন লেগেছিল, কেন বিস্ফোরণ হয়েছিল; এসব কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে রোধ করা যায়; সে জন্য প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করেছি আমরা। এসব বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাবেন বিভাগীয় কমিশনার।’

কেন দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষ দায়ী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় অবশ্যই মালিকপক্ষের অবহেলা ছিল। সেইসঙ্গে সরকারি তদারকি সংস্থা এবং শিপিং লাইনগুলো কম দায়ী নয়। ডিপোতে দক্ষ জনবলের অভাব ছিল। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল দুর্বল। আমদানি-রফতানিতে ব্যবহৃত কনটেইনারের ব্যবস্থাপনা ও খালি কনটেইনারের সংরক্ষণ সঠিক ছিল না। সেইসঙ্গে ডিপোতে নিয়ম মেনে রাসায়নিক না রাখার কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এসব তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে আগুন: মিললো আরও এক দেহাবশেষ

মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ জাতীয় দুর্ঘটনা রোধে ২০টি সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কনটেইনার ডিপো বা অফডক নীতিমালাকে হালনাগাদ করতে হবে, কনটেইনার ডিপোগুলো পরিচালনায় ২৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়; এগুলো এক জায়গায় আনতে হবে। শিল্প এলাকায় আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের পৃথক প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করতে হবে।’

বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত ৯ সদস্যের কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রাশেদ, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের মেজর আবু হেনা মো. কাউসার জাহান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম ও চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছিল।

গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। ঘটনার পরদিন ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও এক মাস পর প্রতিবেদন জমা দেয়। 

আরও পড়ুন: ডিপোতে আগুন: তদন্ত শেষ করতে পারেনি ৬ কমিটির পাঁচটি

এদিকে, এ ঘটনায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা আরও পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের করা কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। বন্দর টার্মিনালের ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।

এ তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনটি ছিল ২৪ পৃষ্ঠার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত সাড়ে ৮টায় ডিপোর কনটেইনারে ধোঁয়া দেখা গেলেও তখন পর্যন্ত আগুন লাগেনি। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীদের সেখানে রাসায়নিক থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি। ডিপোর নিরাপত্তা বজায় না রেখে সেখানে পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে বিপজ্জনক পণ্যসহ রাসায়নিক রাখা হয়েছিল।’

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে কনটেইনার বিস্ফোরণ: এক মাসেও অগ্রগতি নেই মামলার

এ প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে প্রতিবেদনে কি বলা হয়েছে, তা নিয়ে পরে কথা বলবো।’