রাঙামাটিতে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সেতু

কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ শুরু হচ্ছে সপ্তাহখানেক পরেই। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে শুরু হয়ে গেছে ফুটবল উন্মাদনা। এর রেশ পৌঁছেছে পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটিতেও। অনেকেই প্রিয় ফুটবল দলকে সমর্থন জানিয়ে ছাদে পতাকা টানিয়েছেন। কেউ আবার পুরো ভবনটিই প্রিয় দলের পতাকার রঙে সাজিয়েছেন। তবে রাঙামাটিতে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। শহরের দুটি সেতু আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙানো হয়েছে। এ কারণে সেতু দুটি পরিচিতি পেয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সেতু নামে। তবে এখানেও সেতু নিয়ে যথারীতি বিভক্ত সমর্থকরা।

রাঙামাটি শহরের কাছেই রয়েছে দুটি সেতু। একটি আসমবস্তি ব্রাহ্মণটিলা এবং অন্যটি রিজার্ভ বাজার ঝুলুক্যাপাড়া এলাকার ওয়াই আকৃতির সংযোগ সেতু। ঝুলুক্যাপাড়া এলাকার সেতুটি তৈরির পর কর্তৃপক্ষ আকাশি-সাদা রঙ করে দেন। এ কারণে এটি ‘আর্জেন্টিনা সেতু’ হিসেবে পরিচিতি পায়। শহরের মানুষ সেতুটিকে এই নামেই চেনে।

এদিকে কম যায় না ব্রাজিল সমর্থকরাও। আর্জেন্টিনা সেতুর নামকরণের পর থেকে শহরের আসামবস্তি সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙাতে দাবি তোলেন তারা। তাই পৌরসভা থেকে সেতুটি হলুদ-সবুজ রঙে রাঙিয়ে দেয়। এরপর থেকে আসামবস্তির এই সেতুটিও ব্রাজিল সেতুর তকমা পেয়ে গেছে।

প্রিয় দলকে সমর্থন জানিয়ে ছাদে পতাকা টানাচ্ছেন অনেকে। আবার এদিকে দুই সেতুর রঙ ও নামকরণ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে যেমন রয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, তেমনি একে-অন্যের সেতু নিয়ে টিপ্পনি কাটতেও ছাড়ছেন না।

আসামবস্তি সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙে সাজানো হয়েছে

ব্রাজিলের সমর্থরা বলছেন, সেতুর রঙ আকাশি-নীল করতে হবে এমন তো কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, তারপরও আকাশি-নীল করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বিপরীত দিকে আসামবস্তি সেতু হলুদ-সবুজ রঙের আস্তর পড়ায় একে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা।

আর্জেন্টিনা সমর্থক নাছির উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। বাংলাদেশ না থাকায় বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের সমর্থক আমি। রাঙামাটিতে আমরা যারা আর্জেন্টিনা সমর্থক আছি তারা সবাই খুব গর্বিত। কারণ এই শহরে দুটি সেতুর রঙ আর্জেন্টিনা পতাকার রঙের সাথে মিল হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এই দুটি সেতু আর্জেন্টিনা সেতু হিসেবে বেশি পরিচিত। আর কয়েকদিন পর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরু হবে। আমরা আমাদের পছন্দের দলকে সমর্থনে বড় পর্দায় খেলা দেখবো।’

আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের আরেক সমর্থক লাবণী রায় বলেন, ‘আসামবস্তি সেতুটি আগে অন্য রঙে ছিল। ইদানিং দেখছি এটি ব্রাজিলের পতাকা রঙে রাঙানো হয়েছে। এটি কোনোভাবে কাম্য নয়। আমার মনে হয় এটি ষড়যন্ত্র।’

ব্রাজিল ফুটবল দলের সমর্থক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রাজিল ফুটবল দলের সমর্থক শহরের দুটি আর্জেন্টিনা সেতু থাকলেও সেখানে দর্শনার্থীরা সেভাবে যায় না। ব্রাজিল সেতুতে লোকজনের আগমন বেশি ঘটে। তাহলে বুঝে নিতে হবে কোন দলের সমর্থক বেশি। আমি আরও বেশি আনন্দিত হবো এবারের বিশ্বকাপ ব্রাজিল নিলে।’

ব্রাজিল ফুটবল দলের আরেক সমর্থক মো. বাবর আলী বলেন, ‘যারা এই সেতুকে ব্রাজিলের রঙে রাঙিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। ব্রাজিল দলের খেলাগুলো এই সেতুতে বড় পর্দায় দেখবো’।

রিজার্ভ বাজার ঝুলুক্যাপাড়া এলাকার সেতুটি সাজানো হয়েছে আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা বলেন, ‘সংযোগ সেতুতে আকাশি-সাদা রঙের কারণে অনেকে মনে করছেন আমরা আর্জেন্টিনা সমর্থক। স্থানীয় ব্রাজিল সমর্থদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সেতু হলুদ-সবুজ রঙ করার চিন্তাও করছি আমরা।’

রাঙামাটি পৌরসভা পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘রাঙামাটিতে প্রায় সমান সমান আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল দলের সমর্থক আছে। শহরে দুটি আকাশি ও সাদা রঙের সেতু আছে, যা আর্জেন্টিনা সেতু হিসেবে পরিচিত। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রাজিল দলের সমর্থকরা আমার কাছে আসামবস্তি সেতুটি হলুদ-সবুজ রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। তাদের দাবির কারণে আসামবস্তি সেতুটি হলুদ-সবুজ রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাবির মুখে আসামবস্তি সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙ করলেও আমি কিন্তু ব্রাজিল সমর্থক হয়ে যাইনি! আমি আর্জেন্টিনার সমর্থকই আছি।’