ভারত সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি কৃষকের লাশ ফেরত দিলো ১৭ দিন পর 

ফেনীর পরশুরামের সীমান্ত এলাকায় নিহত কৃষক মেজবাহের লাশ ১৭ দিন পর বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় প্রশাসন। লাশ গ্রহণের পর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে বিলোনিয়া ইমিগ্রেশনে চেকপোস্টে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া স্থলবন্দরের চেকপোস্ট দিয়ে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

পরশুরামের মজুমদার হাট সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিজিবি, বিএসএফ ও পুলিশের উপস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন খেজুরিয়া কোম্পানি কমান্ডার জেসিও সুবেদার ওমর ফারুক ও পরশুরাম মডেল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ২০০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সারসীমা কোম্পানি কমান্ডার এসি সত্যিয়া পাল সিং ও ভারতীয় বিলোনিয়া থানার ওসি পরিতোস দাস।

এই সময় নিহতের স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও স্থানীয়রা লাশ পরশুরাম উপজেলার উত্তর গুথুমা গ্রামের মেজবাহের (৪৭) বলে শনাক্ত করেন। নিহত কৃষক পরশুরাম পৌর এলাকার উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় কৃষক।

লাশ হস্তান্তরের সময় পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- স্ত্রী মরিয়ম বেগম, একমাত্র ছোট বোন পারুল আক্তার ও নিহতের চার মেয়েসহ পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন।

ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ জানায়, ভারতের সীমানার অংশে থাকা লাশ অর্ধগলিত অবস্থায় তারা ১৭ নভেম্বর উদ্ধার করে ভারতের আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্তের পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ ফেরত দেওয়া হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী অভিযোগ করেন, তার স্বামীর লাশ চেনার কোনও উপায় নেই। লাশ অনেকটা পচে-গলে গেছে। তিনি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

মরিয়ম বেগমের দাবি, বিএসএফ তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে নিয়ে বিনা অপরাধে গুলি করে হত্যা করেছে।

কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন বলেন, গত ১৩ নভেম্বর রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মেজবাহ বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যান। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। লাশ শনাক্তের কোনও সুযোগ নেই, পচে গলে গেছে।

ভারতের বিলোনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক পরিতোষ দাস জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও তাদের হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে বাংলাদেশের পুলিশকে দেওয়া হবে।

পরশুরাম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাশ ফেরত দেওয়ায় পর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৩ নভেম্বর উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামে সীমান্তবর্তী এলাকায় ধান কাটতে গেলে বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন পর স্থানীয়রা তার লাশ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের ১০০ গজ ভেতরে পড়ে থাকতে দেখে বিজিবিকে খবর দিলে ১৬ নভেম্বর রাত ৩টায় বাংলাদেশি লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে লাশ ফেরত দেয়।