সীতাকুণ্ডে বারবার দুর্ঘটনার কারণ জানালেন জেলা প্রশাসক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অপরিকল্পিতভাবে ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। যেগুলোতে রাখা হয়নি পর্যাপ্ত জলাধার ও অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম। যে কারণে আগুন লাগলেও নেভানো কষ্টকর হয়ে পড়ে, বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি।

সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। 

এর আগে সোমবার রাতে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। বিষয়টি মঙ্গলবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তবে এখানে কী আছে, তা আমার জানা নেই। এ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো।’ 

সীতাকুণ্ডে বারবার দুর্ঘটনার জন্য অপরিকল্পিত শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠাকে অন্যতম দায়ী করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আগুন লাগলে সেখানে পানির পর্যাপ্ত রিজার্ভার নেই। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়। এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেজন্য বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনারোধে অক্সিজেন কারখানার কর্মকর্তাদের নিয়ে আগামী ২০ মার্চ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা কথা বলবেন। কীভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, তা অবহিত করা হবে।’

সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা রি-রোলিং মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘অক্সিজেন কারখানায় এই ধরনের দুর্ঘটনা দেশে এটাই প্রথম। গত ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে মাত্র চার-পাঁচটি। তাই অনেক গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত কাজ করতে হয়েছে আমাদের। একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তে কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে কী কী উদ্যাগ নিতে হবে, তাও তুলে ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।’

দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের অবহেলা অবশ্যই ছিল উল্লেখ করে রাকিব হাসান বলেন, ‘অক্সিজেন বোতলজাত করার সময় অতিরিক্ত চাপেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রতিবেদনে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। কারখানা ব্যবস্থাপনায় তাদের ত্রুটি ছিল। দক্ষ জনবল সীমা অক্সিজেন কারখানায় রাখা হয়নি। কারণ দক্ষদের বেশি বেতন দিতে হয়। এজন্য কম বেতনের কর্মী দিয়ে কারখানার কাজ চালিয়েছে তারা। বিএসসি ডিগ্রিধারী কোনও ইঞ্জিনিয়ার না রেখে প্ল্যান্ট পরিচালনার জন্য রাখা হয়েছিল দুজন ডিপ্লোমাধারীকে। যাদের কারখানা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা ছিল না। যার কারণে বিস্ফোরণের আগে ত্রুটি কী ছিল, তা বুঝতে পারেননি তারা।’

গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হন। আহত হন ৩০-৩৫ জন। ঘটনার দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক।