জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের কবরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এলাকার সাধারণ মানুষ এ ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, কবর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় বোয়ালখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন প্রয়াত মইন উদ্দীন খান বাদলের ভাতিজা আবেদ খান।
বোয়ালখালী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি মাইক্রোবাসে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত এসে ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটিকে থানা পুলিশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। দ্রুত এ ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কবরে হামলার এ ঘটনাকে ঘিরে বোয়ালখালী উপজেলা পশ্চিম সারোয়ারতলী এলাকায় তথা চট্টগ্রামে চলছে নানান সমালোচনা। গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে মইন উদ্দীন খান বাদল মারা গেছেন। অথচ তার কবরেই মঙ্গলবার বিকালে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় জঘন্য কাজ। এর সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে হবে।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের ভাতিজা অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মাইক্রোবাসে করে ৭ জনের একদল দুর্বৃত্ত এসে কবরে অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। হামলায় কবর ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়। হামলাকারীরা চট্টগ্রাম শহর থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা কেন, কী উদ্দেশ্যে একজন মৃত মানুষের কবরে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। পুলিশ দুর্বৃত্তদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করেছে এবং এটির নম্বরও পেয়েছে বলে জানিয়েছে। আশা করছি এ ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা দ্রুতই আইনের আওতায় আসবে।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমার স্বামী মইন উদ্দীন খান বাদল মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ থেকে আরও তিন জন সংসদ সদস্য এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি কিংবা আমার ছেলে-মেয়েদের কেউ বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আমার স্বামীর সঙ্গে কারও শত্রুতা কিংবা প্রতিহিংসা আছে তাও আমার জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন মৃত মানুষের কবরের সঙ্গে এমন শত্রুতা করতে পারে তা আমি আগে কখনও শুনিনি। যারা করেছে তারা কী উদ্দেশে করেছে তাদের মোটিভ জানা দরকার। তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার। পুলিশ বলেছে, তারা চেষ্টা করছে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের গ্রেফতারে।’
এ ঘটনায় সেলিনা খান মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘আমি মিসেস মইন উদ্দীন খান বাদল। আমার স্বামী ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ইন্তেকাল করেছেন। কতিপয় সন্ত্রাসী আজ দুপুরে গাড়ি নিয়ে এসে মইন উদ্দীন খান বাদলের পৈতৃক ভিটার কবরের ওপরের গাছে এবং কবরে আগুন দিয়ে ভাঙচুর করে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেলো। জীবিত মানুষদের অকাতরে হত্যা করে শান্তি হচ্ছে না। এখন কবরে ও মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না। এত অন্যায় আল্লাহ সহ্য করবে না। এই বাংলাদেশ আমি অন্তত চাই না। আল্লাহর লানত পড়ুক।’
এ প্রসঙ্গে বোয়ালখালী থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতিকারী সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের কবর ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের বহনকারী গাড়ি আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’