সেলিম ওসমানের পক্ষে থাকবে পরোক্ষ সমর্থন

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে ভিন্ন নামে মাঠে নামছে হেফাজত

নারায়ণগঞ্জে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ইস্যুতে এবার মাঠে নামছে হেফাজতে ইসলাম। আগামীকাল শুক্রবার শহরের ডিআইটি জামে মসজিদ এলাকাতে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে তারা। তবে জুমার নামাজের পরে আয়োজিত এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের নেতৃত্বে হেফাজতের নেতারা থাকলেও কৌশলগত কারণে সংগঠনটির নাম উহ্য রেখে তা ‘সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা নারায়ণগঞ্জ’ ব্যানারে আয়োজন করা হবে। আভাস পাওয়া গেছে, ওই বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বক্তব্যকে সমর্থন করতে যাচ্ছেন হেফাজত নেতারা। 

বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলে গত ৮মে থেকে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও ১৩ মে শুক্রবার প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও তাকে মারধরের ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচিত হয়। এ অবস্থায় গত ১৮ মে বুধবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করেছিল নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলাম। তবে বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এদিন হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।

জেলা হেফাজতের সমন্বয়ক ও মহানগর কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,‘শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর শহরের ডিআইটি জামে মসজিদ এলাকাতে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতার ব্যানারে মিছিল হবে। বন্দরে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে ভিডিও এসেছে যেখানে ওই ছাত্র স্বীকার করেছে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এ কারণেই একজন মুসলমান হিসেবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাবো।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক হেফাজত নেতা জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সেদিন একজন মুসলমান হিসেবে যা করেছেন তাকে সমর্থন করে হেফাজত। তাই আগামীকালের বিক্ষোভ সমাবেশে তাকে সমর্থন করতে পারে হেফাজত। 

উল্লেখ্য, গত ৮ মে বন্দরে পিয়ার সাত্তার স্কুলে রিফাত হোসেন নামের স্কুল ছাত্রকে মারধরের সময়ে ক্লাসরুমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ওই ছাত্র ও তার মা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়। ১৩ মে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক চলাকালে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। একই সময়ে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন এমন কথা প্রচার করে কে বা কারা ঘোষণা দিলে হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে শালিস চলাকালেই তাকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় গ্রামবাসী। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রশাসনের লোকজন স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্তলে ডেকে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তাকে প্রথমে চড় মারেন সংসদ সদস্য। পরে জনতার সামনে তাকে কান ধরে ওঠবোস করান তিনি। প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় মারধরের কথা উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার সকালে পুরো বিষয়টি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ধর্ম নিয়ে কটূক্তি হয়েছে দাবি করে দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে দেন, ‘ইসলামকে কটূক্তি করার কারণেই একজন কটূক্তিকারীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কোনও শিক্ষককে আমি শাস্তি দেই নাই। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।’

আরও পড়ুন: ৬ জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ডিএমপির ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

 /টিএন/