‘আমি কোনও ঘুষের ঘটনায় জড়িত না, চাপ সৃষ্টি করতেই এ প্রতিবেদন’

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত (ফাইল ছবি)নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একজন ইংরেজি শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছিলেন বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। কিন্তু ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মোবাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে বেশ আক্ষেপ নিয়েই বলেন, ‘আমি ভালো নেই। ভালো থাকতে পারি না। আমি কোনও ঘুষের ঘটনায় জড়িত না। তারপরেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তবে পুলিশ বলছে, তারা যথার্থ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মামলায় গত ১৭ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ যার শুনানি আগামী ২৪ মে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশের পর শ্যামল কান্তির প্রতিক্রিয়া জানতে দিনভর চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ছিলেন না বাসায়ও।

রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শ্যামল কান্তির। তিনি বলেন, ‘আমাকে লাঞ্ছনার ঘটনার পর তো নানাভাবে হুমকি, চাপ দেওয়া হচ্ছে। তা তো সবাই জানে। তোমরা সাংবাদিকরাও জানো। কিন্তু ওই ঘটনায় তো আমি মামলা করি নাই। আদালতের নির্দেশে পুলিশ মামলা করেছে। আইন তার গতিতে চলছে। সেখানে আমার কোনও ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়গুলো আমি সেলিমকে (এমপি সেলিম ওসমান) সহ সবাইকে বলেছি-জানিয়েছি। কিন্তু তারপরেও আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আর সেই চাপে রাখতেই আমাকে মিথ্যে ঘুষের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনও ঘুষের সঙ্গে জড়িত না। আমি ঘটনাই জানি না। একটি মিথ্যে ঘটনা সাজানো হয়েছে। সেই সাজানো ঘটনায় আমাকে খলনায়ক বানাতে চাচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। আমাকে স্কুল থেকেও সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন এ মামলায় কী করে আমাকে সরাবে সে প্রক্রিয়া চলছে। তবে ভগবান সব জানে।’

শ্যামল কান্তি ভক্ত আরও বলেন, ‘আমাকে কোনও পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘুষের মামলা নিয়ে কোনও ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। সেই কারণে এটা একপেশে মনে হচ্ছে। এটা সাজানো তদন্ত।’

জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থী রিফাতকে মারধর ও শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনজন নারায়ণগঞ্জ আদালতে তিনটি মামলার আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেন। পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সোহেল আলম  এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশিদ ১৭ এপ্রিল শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধি আইনের ১৬১/৪১৭/৪০৬/৪২০ ধারায় আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। মামলার ধার্য তারিখ আগামী ২৪ মে প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সেদিন এ বিষয়ে শুনানি হবে।

চারজনকে সাক্ষী দেখিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য শ্যামল কান্তি ভক্তকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। এরপর আরও এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন শ্যামল কান্তি। পরে আরও এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের এমপিওভুক্তের দরখাস্ত কোনও স্থানেই পাঠাননি। পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৬ সালের ১২ মে কোনও টাকা নেননি বলে অস্বীকার করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা যথার্থ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।

গত বছরের ১৩ মে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা আদালতে বিচারাধীন। আগামী ১৪ মে সেলিম ওসমানকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে।

/বিএল/