কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে পেটালেন সেই নূর হোসেনের ভাতিজা!

শিহাব হোসেন শোভনের শরীরে আঘাতের চিহ্ননারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বাসার সামনে থেকে ক্যাডার দিয়ে শিহাব হোসেন শোভন (১৯) নামের এক কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে। তিনি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির আসামি নূর হোসের ভাতিজা।

শোভন ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের কার্যালয়ে শোভনকে তুলে নিয়ে ক্যাবল চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে। এই ঘটনার পর থেকে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে কাউন্সলর শাহজালাল বাদলের কর্মচারী পরিচয়দাতা নাঈম আহমেদ জানান, ঘটনার দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’





জানা গেছে, কলেজছাত্র শিহাব হোসেন শোভন উত্তর রসুলপুরের ইউসুফ হোসেনের ছেলে। এবার তিনি রাজধানীর কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শিহাব হোসেন শোভন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যার দিকে বাসার সামনে ছিঁড়ে পড়ে থাকা ইন্টারনেট সংযোগের লাইন মিস্ত্রি দিয়ে মেরামত করার কাজ তদারকি করছিলাম। এই সময় ৪-৫টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি রিকশায় প্রায় ১৫-১৬ জন লোক এসে আমাকেসহ মিস্ত্রি রিয়াজ ও অচিন্ত্যকে দুই রিকশায় তুলে নেয়। চিৎকার করলে আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এরপর আমাদের তিন জনকে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নয়াআঁটি রসুলবাগ বটতলার বাসার নিচতলায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে আটকে রেখে আমাকে লাঠি, লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটায় এবং কিল-ঘুষি-লাথি মারে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধর করে কাউন্সিলরের লোকজন। পরে কাউন্সিলর এলে তার সামনে আমাকে আরও একদফা মারে। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার বাবা ও ভাই এলে আমাদের তিন জনকে ছেড়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন,  ‘থানায় গিয়ে যেন অভিযোগ করতে না পারি, সে জন্য ঘটনার পর থেকে আমাদের বাড়ির ওপর নজর রাখছেন কাউন্সিলরের লোকজন।’

শোভনের বাবা ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমি বড় ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সুজনকে নিয়ে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যাই। প্রথমে আমাদের ওই বাসায় ঢুকতে দেয়নি। পরে কান্নাকাটি করে লোক জড়ো করার পর বাসায় ঢুকতে দেয়। বাসায় ঢুকে দেখি, বাদলের লোকজন আমার ছেলেসহ তিন জনকে ঘিরে রেখেছে। এ সময় অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর বাদল ও তার লোকজন আমার ছেলেসহ তিন জনকে ছেড়ে দেয়।’

শোভনের বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন সুজন বলেন, ‘২০১৬ সালে উত্তর রসুলবাগ এলাকায় আমি রয়েল বিডি নামে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা শুরু করি। গত ৪-৫ মাস আগে কাউন্সিলর বাদলের দু’জন লোক এসে আমাকে বলেন, ‘এখন থেকে তুমি ইন্টারনেট ব্যবসা করতে পারবে না, আমরাই করবো। এর এক সপ্তাহ পর ওই দুই জনের নেতৃত্বে একদল লোক আমার দোকানে এসে ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেয়। এমসি ও সুইচ খুলে নেয়। পরে তারা আমার টানা সংযোগ লাইন দিয়ে ব্যবসা শুরু করে।  এরপর থেকে তারাই ওই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

তবে শাহজালাল বাদলের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে নাঈম আহমেদ বলেন, ‘শোভনকে মারধরের ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম।’ শোভনকে এলাকার ছোট ভাই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি এলাকায় থাকলে ওই দিন এই ঘটনা ঘটতো না।’

এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে একই কথা বললেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক। তিনি বলেন, ‘কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
খাবার নেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম, ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা