দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আটকে আছে সাড়ে চার শতাধিক যানবাহন






আটকে থাকা যানবাহনঘন কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই রাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এরুটে প্রতিদিন প্রায় ছোট-বড় ১৫ হাজারের বেশি যানবাহন পদ্মা নদী পার হয়। ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে ফেরি বন্ধ থাকার কারণে ঘাট প্রান্তে দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে দেড় শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি ফেরির সিরিয়াল না পেয়ে ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত ঘাটেই বসে আছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। ট্রাকের মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে ট্রাকের চালক ও হেলপার। সঙ্গে আনা খোরাকিও ফুরিয়ে গেছে অনেকের।

খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের চালক দিলীপ হালদার বলেন, ‘সোমবার সকাল ৯টার সময় দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি, এখন বিকাল ৪টা— এখনও ফেরির দেখা পাইনি। শীতকাল এলেই কুয়াশায় ফেরি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে।’

বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের যাত্রী মোশারররফ হোসেন বলেন, ‘সোমবার সকাল ১০টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছালেও বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাস ফেরিতে উঠতে পারেনি। সারাটা দিন ঘাটে বসেই কেটে গেল। কখন যে ঢাকায় যাবো, তা বুঝতে পারছি না ভাই।’

আটকে থাকা যানবাহনঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রামগামী চাল বোঝাই ট্রাকের চালক মো. সুমন হোসেন বলেন, ‘ট্রাকে চাল বোঝাই করে রাখা হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটে এসে কয়েকদিন ধরে আটকা পড়ে আছি। সময়মত চাল পৌঁছাতে না পারলে মালিকের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’

বেনাপোল থেকে চট্টগ্রামগামী চাল বোঝাই ট্রাকের চালক মো. ইউনুস বলেন, ‘ট্রাক ভরা চাল। ঘাটে বসে থেকেই কুয়াশায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো. নাসির বলেন, ‘খুলনা থেকে ঢাকায় চাল নিয়ে যাচ্ছি। দৌলতদিয়া ঘাটে এসে কয়েক দিন ধরে বসে আছি। ফেরির সিরিয়াল মিলছে না। পুলিশের কাছে গেলে ওরা বলে চাক্কা বেচে খা।’

আটকে থাকা যানবাহনট্রাক চালক মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গত শনিবার রাত ৮টায় দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে এসে পৌঁছেছি। ২/৩ কিলোমিটার দূরে জ্যামে পড়ি। ঘাটে শুধু বাস ছাড়ে, কোনও ট্রাক ছাড়ে না। কয়েক দিন ধরে ঘাটেই বসে আছি। সময়মতো মালামাল ডেলিভারি দিতে সমস্যা হচ্ছে। যদি ৪টা বাসের সঙ্গে একটি করে ট্রাক ছেড়ে দেয়, তাহলে ট্রাক চালকদের এত কষ্ট হয় না। ঘাটে এত যানজট লাগে না। ঘাটে শত শত ট্রাক আটকে আছে।’

বিআইডব্লিইটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ) মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শীতে তীব্র কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল। কুয়াশার মধ্য দিয়ে ফেরি চালানোর কোনও প্রযুক্তি আমাদের নেই। রাতে কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না নদীতে। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’

তবে যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই পারাপার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃদুল রঞ্জন।