তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাবা না থাকার কারণে খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও খালাত ভাইয়ের চাচাতো ভাই সেরাজুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে মেয়েটিকে উদ্ধার করে আনতে গিয়েছিল। তারা মারা গেলো’।
নিখোঁজের এক মাস পর জীবিত উদ্ধার হয়েও লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো কলেজছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যাকে। টাঙ্গাইলে পুলিশবাহী মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জীবন দিতে হলো তাকে। গাড়িতে থাকা তার খালাতো ভাই ফারুক (৪২) ও মামা সিরাজুল ইসলামও (৫৫) মারা যান।
বন্যার বাড়ি সোনারগা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামে। তার বাবা মৃত আমির হোসেন। বন্যার খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও মামা সিরাজুল ইসলামের বাড়ি পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর গ্রামে।
নিহত বন্যার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বন্যার মা শহিদা বেগম। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার সঙ্গে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে উপজেলার বারদী ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের টেলিফোনে বিয়ে পড়ানো হয়। এ বছরের শেষের দিকে আল আমিনের দেশে ফেরার কথা ছিল।
মঙ্গলবারের এই ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যও আহত হন। তারা হলেন সোনারগাঁ থানার এসআই তানভীর আহমেদ (৩৩), এএসআই হাবিব (৩০), পুলিশ কনস্টেবল আজাহার (৪৫) ও মাইক্রোবাস চালক আকতার (৩৫)।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে পুলিশের মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩
নিহত ফারুকের শ্যালক মুসা উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৮ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে বন্যা অপহরণ হয়। অপহরণের এক মাস পর তার খোঁজ পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সঙ্গে ফারুক ও সিরাজুল ইসলাম রাজশাহীতে যায়। রাজশাহী থেকে বন্যাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজ মোড় এলাকায় ওই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই বন্যাসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।’
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বন্যা ছিল তৃতীয়। কয়েক বছর আগে তার বাবা মারা যায়।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পুলিশ অপহরণকারীকে ধরতে রাজশাহী গিয়েছিল। অভিযান শেষে সেখান থেকে ফেরার পথে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে সোনারগাঁয়ের উদ্দেশে রওনা হলে কুমুদিনী কলেজ মোড় এলাকায় স্পিডব্রেকারে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগে। এ সময় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে মুহূর্তেই গাড়িতে আগুন লেগে যায়। তখন তারা তিনজন আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়। নিহতদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।’
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আহত পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজনদের জাড়িয়ে ধরে ফারুকের স্ত্রী জাহানারা বেগম কাদঁছেন আর বলছেন কীভাবে সংসার চালাবো। কে জোগাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ।
ফারুকের চাচাতো ভাই সিরাজুল ইসলামের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে হাসান সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে আবু সাইদ ভটিবন্দ মিথতাহুলুম মাদ্রাসার ছাত্র।
সিরাজুলের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘সিরাজুল কৃষিকাজ করে সংসার ও দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতো। কিন্তু এখন কে দেখবে আমাদের।’