তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মানুষের ঢলআখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি শেষ হবে আজ রবিবার (১৯ জানুয়ারি)। সকাল থেকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়েছে। এ পর্বে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লির মাওলানা জমশেদ। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে আসছেন।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ৩৫টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি যোগ দিয়েছেন। হেদায়েতি বয়ান শেষ হলে বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম।  

ইজতেমার মাঠজুড়ে বিশাল শামিয়ানার নিচে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অবস্থান করছেন অংশগ্রহণকারী চিল্লাধারী সাথিরা। মুসল্লিরা সবাই নিজের মতো করে শৃঙ্খলা মেনে চলছেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম পর্বের তুলনায় এ পর্বের আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের সমাগম কিছুটা কম হবে।

হেদায়েতি বয়ান: বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি মাওলানা আশরাফ আলী জানান, সকাল থেকে ইজতেমায় বয়ান করছেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। ইমান, আখলাক, দিনের ওপর মেহনত, ইসলামকে শক্তিশালী করা, সব ভেদাভেদ ভুলে নিজের দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা, নবীওয়ালা কাজে দিন ও সময় ব্যয় করা, পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা, নামাজ-রোজা ও আল্লাহর ইবাদত পালনের ওপর বয়ান পেশ করা হয়।

তিনি বলেন, যে দিন ইসলামের বিধান অনুসারে চলবে এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করবে। ইমানকে শক্তিশালী করতে হলে মানুষকে মসজিদের পরিবেশে বসাতে হবে। মুসলমানের নামাজ ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। নামাজ এমনভাবে আদায় করতে হবে, যেমন নবী করিম (সা.) আদায় করেছেন। জোর-জবরদস্তি করে নয়, তাজিমের সঙ্গে বুঝিয়ে কাউকে মসজিদে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার জন্যই করতে হবে।

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মানুষের ঢলযৌতুকবিহীন ৮৬ বিয়ে: শনিবার মূল বয়ান মঞ্চে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত না হলেও ইজতেমা ময়দানের বিশেষ কামরায় (কক্ষে) বর ও কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ৮৬টি যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমি’ নিয়ম অনুযায়ী। এই নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় ১৫০ তোলা রুপা বা এর সমমূল্য অর্থ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।

নিরাপত্তা জোরদার: গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে।

মোনাজাতে অতিরিক্ত মাইক: গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আখেরি মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদফতর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর-বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগাআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগের ব্যবস্থা করেছে।

মোনাজাতে বিশেষ ট্রেন ও বাস: আখেরি মোনাজাতের দিন ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া সব আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। এছাড়া বিআরটিসির শতাধিক বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তামুখী ৩০টি এবং মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করবে। মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় ১০ জানুয়ারি। আর ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্ব শেষ হয়। প্রথম পর্বে ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমাতেও দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলাভির অনুসারী ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমা