ইলিশের দাম নির্ধারণ এবং সিন্ডিকেটের কবল থেকে ইলিশের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুধু তাই নয়, এটিকে আমলে নিয়ে প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন।
২৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে আরও জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে পাওয়া জুন ২০২৫-এর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন থেকে এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সামনে উপস্থাপিত হয়।
চিঠিতে বলা হয়, চাঁদপুরের ইলিশের সুস্বাদু। এই সুযোগ নিয়ে চাঁদপুর ও আশপাশের জেলার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদার ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। যা একেবারই নাগালের বাইরে। চড়া মূল্যের কারণে ইলিশ জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। যেহেতু ইলিশ চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলাতেও ধরা পড়ে, তাই কেবল চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইলিশের মূল্য নির্ধারণ হলে এর ফলপ্রসূ প্রভাব পড়বে না। চাঁদপুরের পাশাপাশি বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরও অনেক এলাকার নদী যেগুলো সাগর তীরবর্তী, সেখানে ইলিশ ধরা পড়ে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নদী বা সাগরে ইলিশ উৎপাদনে ইলিশের উৎপাদন খরচ না থাকলেও ইলিশের বাজার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। যেহেতু ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়, সেহেতু ইলিশ আহরণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের প্রতি লক্ষ রেখে ইলিশের মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন। আর এই মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। ইলিশ সংক্রান্ত এই প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এর অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এর আগে জুন মাসের শেষ দিকে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ প্রাপ্তির জায়গাগুলোতে ইলিশের আকাশচুম্বী দাম দেখে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য এবং এর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমাতে মন্ত্রিপরিষদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি পাঠান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। ওই চিঠির অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকেও পাঠান তিনি। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, চাঁদপুরের ইলিশের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় এবং সেটি মওসুমের শুরু থেকেই অব্যাহত থাকায় প্রশাসনসহ ভোক্তামহলে চরম অসন্তোষ লক্ষণীয়। এখনও এখানে পদ্মা মেঘনার এক কেজি ইলিশ ২ হাজার টাকার উপরে। এক কেজি সাইজের চেয়ে বেশি হলে ২ হাজার ৫শ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আমি যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ের উদ্যোগ নিতে বলেছেন।’