ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ভুয়া নিয়োগপত্রশরীয়তপুর ডিসি অফিসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে দুই ভাইবোনের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হালিমা খাতুন নামে এক সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে। হালিমা ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক। তিনি ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করেছেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হালিমা ইতোপূর্বে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসসমূহে কিছু সংখ্যক অফিস সহায়ক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তখন হালিমা তার পূর্ব পরিচিত গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামের শাহ আলম বেপারীর মেয়ে খাদিজা আক্তার ও তার ভাই নাজমুল বেপারিকে ওই পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তাদের কাছ থেকে চাকরি বাবদ ২৪ লাখ টাকা নেন। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর ওই পদে লিখিত পরীক্ষা হয়। কিন্তু খাদিজা ও তার ভাই নাজমুল লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন। তবে হালিমা তাদেরকে জানান লিখিত পরীক্ষায় না টিকলেও কোনও সমস্যা নেই।

পরে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত নিয়োগ আদেশ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং ১ এপ্রিলের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। কিন্তু যোগদান করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন নিয়োগ আদেশটি সম্পূর্ণ জাল। এ ধরনের কোনও নিয়োগপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়নি। এরপর এ বিষয়ে হালিমার সঙ্গে  একাধিকবার বসেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় ৭ জুন খাদিজা আক্তার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগপত্র

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইনকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তদন্তের অংশ হিসেবে বুধবার (২২ জুলাই) দুই পক্ষকে তার কার্যালয়ে ডাকেন এবং উভয় পক্ষের কাছ থেকে তাদের স্বপক্ষের তথ্য প্রমাণ জমা নেন।

খাদিজা আক্তার বলেন, ২৪ লাখ টাকা দিলে তাদের দুই ভাইবোনের সরকারি চাকরি হবে বলে হালিমা জানান। তার কথা বিশ্বাস করে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী আহম্মদ খানের উপস্থিতিতে আমরা ধারদেনা করে ২৪ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেই। কিন্তু ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকারি চাকরির আশা করতে গিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।

এ বিষয়ে হালিমার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাত লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন,  ‘নিজেদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তারাই আমার কাছে এসে তাদের চাকরির জন্য চেষ্টা করতে বলেছিল। সাত লাক টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরতও দিয়ে দিয়েছি। বাকি তিন লক্ষও দিয়ে দেবো। ২৪ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

ভুয়া নিয়োগপত্রতদন্ত কমিটির প্রধান গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের কাজ চলছে। বুধবার দুই পক্ষের কথা শুনেছি। এখন তাদের দেওয়া তথ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেবো।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও পাইনি, পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।