কারখানার সামনে মেয়ের জন্য মায়ের আহাজারি

মা-মেয়ে দুইজনই কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের পুড়ে যাওয়া কারখানাটিতে। বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) আগুন লাগার পরই মা ফিরোজা বেগম হালিমা (৩৮) দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পাণে বাঁচলেও আটকা পড়ে কিশোরী মেয়ে তাসলিমা (১৬)।

শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ওই কারখানা থেকে ৪৯ জনের লাশ বের করা হলেও এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি হালিমার কিশোরী কন্যার। মেয়ের শোকে কাতর হালিমা কারখানাটির ফটকের সামনেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। চোখে-মুখে পানি দেওয়ার পর সজ্ঞান হলেও মেয়ের জন্য আহাজারিতে ব্যাকুল এ মা।

এই ধ্বংসস্তূপে মেয়েকে পাবেন কি-না এই শোকে দিশেহারা হালিমা পথ আগলে দাঁড়ান ঘটনাস্থলে আসা ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার। সেই কর্মকর্তার হাতে কখনও পায়ে জড়িয়ে ধরেছেন। বারবার চিৎকার করে বলছেন, ‘ও স্যার, আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুঁইজ্জা দেন স্যার।’

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে মেয়ের খোঁজে কারখানাটির সামনে রয়েছেন ফিরোজা বেগম হালিমা। ২০ ঘণ্টায়ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিখোঁজ মেয়েকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। যেকোনও উপায়ে অন্তত সন্তানের লাশটা ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: আগুনে পোড়া লাশের সারি, স্বজনদের আহাজারি

হালিমার জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায়। বাবা বাচ্চু মিয়া দিনমজুর। সংসারের অভাব ঘোচাতে পাঁচ বছর আগে মাত্র ১১ বছর বয়সে হাসেম ফুডের কারখানাটিতে শ্রমিকের কাজ নেয় হালিমার মেয়ে তাসলিমা। পাঁচ বছর পর এসে তাসলিমার বেতন দাঁড়িয়েছিলো পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা। মেয়ের আগে থেকেই কারখানার দোতলায় টোস্ট শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। আগুন লাগার সময়েও মা মেয়ে কারখানাটির আলাদা দুটি তলায় কাজ করছিলেন।

বিলাপ করতে করতে হালিমা জানান, কারখানায় আগুন লাগার পর জীবন বাঁচাতে দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। তখনই কারখানার চারতলায় আটকা পড়া মেয়ে তাসলিমার কথা মনে পড়ে। ছুটে যেতে চান চারতলায়। কিন্তু কারখানার নিচের ফটক বন্ধ পেয়ে  হালিমার আর ভেতরে যাওয়া হয় না।

তাসলিমার চাচি আমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আগুন লাগার সময় কারখানার নিচের ফটকটি বন্ধ ছিলো। এ কারণে অনেক শ্রমিকই কারখানাটি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

এদিকে, শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই কারখানা থেকে অন্তত ৪৯ জন শ্রমিকের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান  নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫২ জনে। তবে ভবনটির পাঁচতলা ও ছয়তলার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এ দুটি ফ্লোর ও ভবনের ছাদে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।