ওই ভবনে আর লাশ নেই, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারাখানার আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পাঁচ এবং ছয় তলায় তল্লাশি চালিয়ে আর কোনও লাশ পাওয়া যায়নি।

শনিবার (১০ জুলাই) বিকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনটিতে সর্বশেষ তল্লাশি চালিয়ে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। পরে ভবনটি পুলিশ ও কারখানা কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেন।

তবে দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলার কারণে ভবনের পাঁচ তলার ছাদ ধসে পড়েছে। পুরো ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন।

তিনি বলেন, আগুন লাগা ভবনে আর লাশ নেই। ভবনটিতে যেসব পণ্য উৎপাদিত হতো তাতে প্লাস্টিক, রেজিন, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের মোড়কসহ দাহ্য পদার্থ, কেমিক্যাল ও তেলজাতীয় পদার্থ থাকায় দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলেছে। ফলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একদিকে আগুন নিভিয়ে গেলে পুনরায় সেদিকে আগুন ধরে যায়। এভাবে চলতে থাকায় আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত টানা ৩৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভির কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) ও তদন্ত কমিটির প্রধান লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সেজান জুস কারখানার ভেতরে মেশিন ও কেমিক্যাল একসঙ্গে রাখার কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। কারণ কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে কেমিক্যাল স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের এ কারণেই আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া কেমিক্যালসহ দাহ্য পদার্থ ও প্লাস্টিক, ফয়েল কাগজ, কার্টনসহ বিভিন্ন মালামাল থাকার কারণে আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এজন্য অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ভবনটি নির্মাণে ত্রুটি ছিল। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণ চিহ্নিতকরণসহ সবকিছু চিহ্নিত করে সুপারিশ করা হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, নিহত ও আহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিহতদের আত্মীয়-স্বজন থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো নিহতদের নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব লাশ হস্তান্তর করা হবে।

প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় ৪০০-এর বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।

প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই তিনজন নিহত হয়। 

সবমিলিয়ে, এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।