দুই টেস্ট ও ১০টি ওয়ানডে ম্যাচসহ প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য খেলা গড়িয়েছে যে মাঠে সেটি এখন পড়ে আছে নিতান্ত অবহেলায়। অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় গত ছয় বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের মাঠ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আর্ন্তজাতিক মানের এ মাঠটির সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ খেলোয়াড় ও সংগঠকদের। তাদের মতে অযত্ন-অবহেলার এক অনন্য নিদর্শন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে দ্রুতই মাঠের সংস্কার করে খেলার উপযোগী করতে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আর্ন্তজাতিক ভেনু হিসেবে যাত্রা শুরু করে স্টেডিয়ামটি। দুই টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডেসহ প্রিমিয়ারলীগের অসংখ্য ম্যাচে রঙ ছড়িয়েছেন ক্রিকেটাররা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্টইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচের পর আর কোনও আর্ন্তজাতিক ম্যাচ মাঠটিতে গড়ায়নি।
তিনি আক্ষেপ নিয়ে আরও বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মাঠটি পানির নিচে, আউটার স্টেডিয়াম পানির নিচে থাকায় আমরা খেলাধুলা এবং প্র্যাকটিস পর্যন্ত করতে পারছি না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনও মাথাব্যথা নেই।
স্থানীয় ক্রিকেটার নাহিয়ান বলেন, ফতুল্লা খান সাহেব ওসামান আলী স্টেডিয়ামের পূর্বপাশের আউটার স্টেডিয়ামে ২০১২, ১৩ ও ১৪ সালে একাধারে প্র্যাকটিস করেছি। সে সময় আমার মতো অসংখ্য ছেলে সেখানে প্র্যাকটিস করেছে। কিন্তু মাঠটি রাস্তা থেকে নিচু হওয়ায় এবং সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। যে কারণে মাঠটি দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
তিনি আরও বলেন, একটি মাঠের অভাবে আমাদের খেলাধুলা ও প্র্যাকটিস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ঝরে পড়ছে উঠতি বয়সের খেলোয়াড়রা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে আগামী সাত দিনের মধ্যে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করে দিতে পারে। একজন খেলোয়াড় বা সংগঠক হিসেবে স্টেডিয়ামের দ্রুত সংস্কার শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এই মাঠে যদি একটি আর্ন্তজাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় তবে বাংলাদেশের সব মানুষ কিন্তু নিজের দেশে খেলা হচ্ছে বলেই খেলা দেখবে। এই জন্য বলছি এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, দেশের সম্পদ।
তবে স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সেখানে জলাবদ্ধতার পানি আটকে থাকে। স্টেডিয়ামের প্রকৃত মালিক হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। পরিষদ ক্রিকেট বোর্ডকে মাঠটি ব্যবহারের জন্য দিয়েছিল। স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যৌথভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। শুনেছি খুব দ্রুতই সংস্কার কাজ শুরু হবে। এটি ভেঙে নতুন করে উঁচু করে স্টেডিয়ামের আনুসাঙ্গিক কাজ করা হবে।