আ.লীগ কর্মী হত্যা মামলার আসামি পেলেন নৌকা, ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

সাভারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান চার্জশিটভুক্ত আসামি পেয়েছেন নৌকার মনোনয়ন। তার নাম পারভেজ দেওয়ান। তাকে ইউপি চেয়ারম্যানের মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ন না করে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর।

আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুর রহিমকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই যুবলীগ নেতা সুমন পন্ডি বাদী হয়ে ২৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

আব্দুর রহিমের পরিবারের অভিযোগ, গত ইউপি নির্বাচনে দ্বন্দ্বের জেরে সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের নির্দেশে আব্দুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রহস্যজনকভাবে প্রধান আসামি চেয়ারম্যানসহ ছয় আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরে সিআইডির তদন্তে চেয়ারম্যানসহ ছয় আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের নির্দেশে আব্দুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) শফিউল আলম সোহাগসহ ১৫ জন এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। 

নিহতের ভাই সুমন পন্ডি বলেন, আমার ভাই পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। কিন্তু নির্বাচনে চেয়ারম্যান পারভেজের প্রতিপক্ষকে সমর্থন করেছিল। এরই জেরে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কয়েক মাস পরই চেয়ারম্যানের লোকজন আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পরে পুলিশ চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করলেও জামিনে মুক্ত হয়। এরপর রহস্যজনকভাবে প্রধান আসামি চেয়ারম্যানসহ ছয় আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয় পুলিশ। আদালতে আপত্তি জানালে সিআইডি দেড় মাস তদন্ত করে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়।

পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হাওলাদার বলেন, আব্দুর রহিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি পারভেজ দেওয়ান। তাকে কীভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আমাদের জানা নেই। আমরা তৃণমূল পরিবর্তন চেয়েছিলাম, আমাদের চাওয়ার মূল্যায়ন করা হয়নি।

৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘নিহত আব্দুর রহিম আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সক্রিয় কর্মী ছিল। তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এবারও পারভেজ দেওয়ান গতবারের মতোই পাঁয়তারা করতেছেন। হুমকি দিচ্ছেন। আবারও কর্মীদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করতেছেন। পারভেজ দেওয়ান নৌকার মনোনোয়ন পাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। তিনি তিনবারের চেয়ারম্যান হয়েও একটা নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন করতে পারেননি। এখনও ভাড়া ভবনে চলছে কার্যক্রম। তিনি এবার বিপুল ভোটে পরাজিত হবেন।’

এ বিষয়ে পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘মিথ্যা হত্যা মামলায় আমাকে অব্যাহতি দিয়েছিল পুলিশ। পরে সিআইডি এক মাসের মধ্যে তদন্ত না করে আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছে। খোঁজখবর নিয়েই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্র।’

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ বলেন, হত্যা মামলার আসামির বিষয়টি হয়তো মনোনয়ন বোর্ডের নজরে আসেনি। বিষয়টি হয়তো তাদের জানা নেই। বিষয়টি সাধারণত ইউনিয়ন থেকে আসে উপজেলায়, তারপর জেলায় যায়। ইউনিয়ন থেকে আমাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়নি। যদি কেউ বলতো, তাহলে হয়তো কেন্দ্রে আমরা বিষয়টি জানাতাম।

স্থানীয় সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে কাজ করছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখানের তথ্যের ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এখানে সংসদ সদস্যদের কোনও ভূমিকা নেই। এটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’

ঢাকা জেলা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক বিষ্ণু ব্রত মল্লিক বলেন, আব্দুর রহিম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত চার জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা থাকায় চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানসহ ছয় জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।