ধলেশ্বরীতে ট্রলারডুবি

‌‘মানুষগুলো কি নদীতে মিশে গেলো?’

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় তিন দিন পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৯ জনের সন্ধান মেলেনি। শনাক্ত করা যায়নি ট্রলারটিও। নিখোঁজদের জীবিত পাওয়ার আশা আগেই ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনরা। তারপরও প্রিয় মানুষের মরদেহের সন্ধানে প্রতিদিন ধলেশ্বরীর পাড়ে ছুটে আসছেন। কিন্তু তাদের কোনও হদিস না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। প্রশ্ন তুলেছেন উদ্ধার অভিযান নিয়ে।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল। কিন্তু জীবিত বা মৃত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে আছেন মা-মেয়ে ও ছেলেসহ এক পরিবারের চার জন। তারা হলেন—জিয়াসমিন আক্তার (৩৩), তার মেয়ে তাসমিম আক্তার (১৫), ছেলে তামিম খান (৮) ও মেয়ে তাসফিয়া (১৪ মাস)।

জিয়াছমিনের ভাই মোক্তার হোসেন বলেন, ‘তিন দিন হয়ে গেলো বোন-ভাগিনার মরদেহ পর্যন্ত পাচ্ছি না। কী নিয়ে বাড়ি ফিরবো? কী উত্তর দেবো বাড়ির লোকজনকে?’

প্রিয়জনকে ফিরে পেতে ধলেশ্বরীর তীরে স্বজনদের আহাজারি (ফাইল ছবি)

নিখোঁজ আওলাদ হোসেনের খালাতো ভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘চার দিন ধরে ভাইয়ের খোঁজে নদীর তীরে বসে আছি। কেউ সন্ধান দিতে পারছে না। সকাল থেকে নদীতে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড ঘোরে। কিন্তু কোনও খবর দিতে পারছে না। তারা কী খোঁজে বুঝতে পারছি না। মানুষগুলো কি নদীতে মিশে গেলো?’

জেলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর ডুবুরিদল নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু নিখোঁজদের মরদেহ বা ডুবে যাওয়া ট্রলারের সন্ধান মেলেনি। আমাদের চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই।

আরও পড়ুন: মা ও তিন সন্তান নিখোঁজ, নদী পাড়ে স্বজনদের আহাজারি

নৌ পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদ জানান, নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ট্রলার বা নিখোঁজ কারও সন্ধান মেলেনি। নৌ পুলিশের নিজস্ব ডুবুরি নেই। কোনও লাশ ভেসে উঠলে নৌ পুলিশ উদ্ধার করবে। ট্রলার ও নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়ায় আমরাও চিন্তিত।

তিনি বলেন, শীতের সময় সবাই মোটা-ভারি পোশাক পরে। ধারণা করা হচ্ছে, পোশাকে পানি প্রবেশ করায় ভেসে উঠতে সময় লাগছে। আবার এমনও হতে পারে, ট্রলারটি লঞ্চের ধাক্কায় উল্টে গেছে। যে কারণে  নিখোঁজরা আটকে থাকতে পারেন।   

উদ্ধার অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নিখোঁজদের স্বজনরা

এদিকে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা রিফাত ফেরদৌসকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসানসহ গ্রেফতারকৃত তিন জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড শুনানি রবিবার (৯ জানুয়ারি)।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকায় ধলেশ্বরীতে এমভি ফারহান-৬ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটির ধাক্কায় অন্তত ৩০ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন ৯ জন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান চালিয়েও ডুবে যাওয়া ট্রলারের সন্ধান পায়নি।

বুধবার রাতে নৌ নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় তিন জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলো-এমভি ফারহান-৬ যাত্রীবাহী লঞ্চের মাস্টার মো. কামরুল হাসান, চালক মো. জসিমউদ্দিন ভূইয়া ও সুকানি মো. জসিম মোল্লা।