ডাক্তারের চেম্বারেই বসে থাকে দালালরা

‘ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেয় দালালরা। ব্যবস্থাপত্র দেখে ঠিক করে দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম। সরলমনা রোগীদের বলা হয়, এ পরীক্ষা শুধু ওই ক্লিনিকেই করা হয়।’ এভাবেই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ আশেপাশের জাজিরা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে আরও অনেক অভিযোগ।

ভুক্তভোগীরা জানান, শিবচরের ১০-১২টি ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টার চালাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররাই। ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের পাঠিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হচ্ছে কারণে-অকারণে। অহরহ করানো হচ্ছে সিজার। কিন্ত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার হয় না প্রায় ১০-১২ বছর।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ নিজেই বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন বলে অভিযোগ আছে। তার বেশিরভাগ সময় কাটে শিবচর বাজারের ‘মা ও শিশু হাসপাতালে।’ ওই হাসপাতালের মালিক শারমিন আক্তারের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বে চলছে ক্লিনিক ব্যবসা।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজেই যখন অনিয়মে জড়ান, সেখানে দালালের দৌরাত্ম তো বাড়বেই।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা মাহবুবুল আলম জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দালালরা সবসময় হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে। অনেক দালাল ডাক্তারের চেম্বারেই বসে থাকে। চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন দেওয়া মাত্রই তারা রীতিমতো হামলে পড়ে রোগীর ওপর।

কাঠালবাড়ি থেকে আসা ফয়জুল শেখ অভিযোগ করেন, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের শৌচাগারও বেহাল। এখানে মানুষ এলে এমনিতেই রোগী হয়ে যাবে। ভর্তি হওয়া রোগী বাবুল খা জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তিন-চারদিন পর একবার আসেন। হাসপাতালে গন্ধে থাকা দায়।

মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা জানান, হাসপাতালটি কিছুদিন আগে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগী কম। হাসপাতালটি নিজেই রুগ্ন। রোগী এলে ডাক্তাররাই অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

খানকান্দি গ্রামের রাজু খান জানান, হাসপাতালের সামনের গেটে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স থাকে সবসময়। রোগীদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়াই তাদের কাজ। ভাড়াও হাঁকে ইচ্ছেমতো। সেই ভাড়া থেকে আবার কমিশন নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক মেডিক্যাল কর্মকর্তা জানান, ‘দালালদের উৎপাতের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। সমাধান হয়নি। এমনকি ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেও সমাধানের চেষ্টা করেছি। তাদেরও এ নিয়ে আলাপে আগ্রহ নেই।’

দালাল ২

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মিঠুন বিশ্বাস জানান, ‘হাসপাতালের ভেতর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করে এমন ছেলে-মেয়েদের প্রায়ই দেখা যায়। আমরা কয়েকবার এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্ত ক্লিনিক মালিকদের দমানো যাচ্ছে না। আর ক্লিনিকগুলো তো চালাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররাই।’

এ প্রসঙ্গে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে দালালদের প্রবেশ বন্ধ করা হবে। তবে দালাল নির্মূল করা আমার একার দায়িত্ব নয়। অফিস সময়ের বাইরে কোনও ডাক্তার ক্লিনিকে গেলেও আমার কিছু করার নেই। তারা অন্য কোথাও প্র্যাকটিস করতেই পারেন।’

পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একজন সুইপার কাজ করে। এ ব্যাপারে অনেকবার কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু সমাধান পাচ্ছি না।’