টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১৩, কারখানা বন্ধ

গাজীপুরের টঙ্গীতে টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আট শ্রমিক ও পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। এ সময় সংঘর্ষে আট শ্রমিক ও পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। পরে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড, ৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। 

আহত শ্রমিকরা হলেন- শাহিনুর আক্তার (১৮), নুর মোহাম্মদ (২৫), তাসলিমা (২৬), জিয়া (২৫), মনিরুল (২৪), সাফিনা আক্তার (১৮), মুক্তি আক্তার (৩২) ও কামাল (২৩)। মুক্তি ও কামালকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও বাকিদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আহত পুলিশ সদস্যদের নাম জানায়নি পুলিশ।

শ্রমিকরা জানান, টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজার) লুৎফর রহমান শনিবার ফিনিশিং সেকশনের সহকারী অপারেটর রিপা আক্তারকে লাঞ্ছিত করেন। সহকর্মীকে লাঞ্ছিতের খবর অন্যান্য শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ব্যবস্থাপকের বিচারের দাবিতে ওই দিনই শ্রমিকরা উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে তারা ১২টি দাবি উল্লেখ করে মালিকপক্ষের কাছে উপস্থাপন করেন। 

সোমবার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বাসায় চলে যান। পরে মালিকপক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার করে নোটিশ টানিয়ে দেয়। এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়।

জিএমপি উপ-কমিশনার (অপরাধ, দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় গেলে গেটে বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা পাশের রেডিসন পোশাক কারখানার সামনে এসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল ছোড়েন। 

তিনি আরও জানান, এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আবারও উত্তেজিত শ্রমিকরা দলবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। তখন পুলিশ ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড, ৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শ্রমিকরা যাওয়ার পথে পেট্রিয়ট ইকো লিমিটেড কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বাধা দিলে পুলিশের ওপরও ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।

টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেডের মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নারী শ্রমিকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে ঘটনার দিনই উৎপাদন ব্যবস্থাপককে অপসারণ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শ্রমিকরা শ্রম আইনের পরিপন্থি অযৌক্তিক দাবি পেশ করেছে। তারা উৎপাদন ব্যবস্থাপকের অপসারণ চেয়েছে, আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক নেতা সাধারণ শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

/এএম/