‌‘লঞ্চে বাড়ি ফিরতে না করছিলাম, কথা শোনেনি’

‌‘লঞ্চে করে বাড়ি ফিরতে না করেছিলাম, ওরা কথা শোনেনি। এখন এক বোন লাশ হয়েছে, অন্যজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের মায়ের কাছে কী জবাব দেবো, কীভাবে কথা বলবো?’

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন শিপ্রা বর্মন। রবিবার (২০ মার্চ) কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চে তার বোনের দুই মেয়ে ছিল। পরে বড় ভাগনি স্মৃতি রাণীর (১৯) লাশ পাওয়া যায়। এখনও নিখোঁজ ছোট ভাগনি আরোহী রানী (৩)। তার সন্ধানে সকাল থেকে নদীর পারে অপেক্ষা করছিলেন শিপ্রা। কিন্তু দুপুর গড়ানোর পরও খোঁজ মেলেনি। আরোহী ও স্মৃতি মুন্সীগঞ্জের ইসমাইলের চর এলাকার জয়রাজ বংশীর মেয়ে।

শিপ্রা বর্মন বলেন, ‘স্মৃতি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। হোলি অনুষ্ঠান উপলক্ষে গত শুক্রবার ছোটবোন আরোহীকে নিয়ে আমার বন্দর একরামপুরের বাড়িতে বেড়াতে আসে। দুই দিন পর (রবিবার) লঞ্চে বাড়ি ফিরছিল। ফেরার পথে দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।’

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চকে ডুবিয়ে দেওয়া জাহাজটি সিটি গ্রুপের

শীতলক্ষ্যার পারে দেখা যায়, আরোহীর মামা রিপন বর্মন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে আর কে আসবে বেড়াতে? স্মৃতি আর আসবে না। এদিকে আরোহীকেও পাচ্ছি না। আমার কলিজার টুকরা দুইটা আর নেই। এখন আমার বোন কী নিয়ে বাঁচবে?’

রবিবার (২০ মার্চ) দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় এমভি রূপসী-৯ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চের ১৫ থেকে ২০ যাত্রী সাঁতরে তীরে ওঠেন। লঞ্চটিতে প্রায় অর্ধ-শতাধিক যাত্রী ছিল বলে বেঁচে ফেরা কয়েকজন যাত্রী দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আট জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম দিন ছয় ও দ্বিতীয় দিন (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত দুই জনের লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনায় প্রথম দিন উদ্ধার ছয় লাশের মধ্যে স্মৃতি রানী ছিলেন।