১৯টি দিন মনে হয়েছে বছরের সমান: হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী

ধর্ম অবমাননার অভিযোগের মামলায় ১৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। রবিবার (১০ এপ্রিল) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

এর আগে দুপুর সোয়া ১টায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়া পাঁচ হাজার টাকা বেল বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনের পর প্রতিক্রিয়ায় হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেন, ‘১৯টি দিন মনে হয়েছে বছরের সমান। দিনগুলো অনেক কষ্ট ও আতঙ্কে কেটেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাটিয়েছি। জামিনের পর তিনি যেন আবার স্কুলে ফিরতে পারে, কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সেই আশা করি।’

আরও পড়ুন: কারামুক্ত হলেন হৃদয় মণ্ডল

হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ২৯৫ ও ২৯৫ এর ‘ক’ ধারায় মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৯৫-ক জামিন অযোগ্য ধারা। যেহেতু জামিন অযোগ্য ধারা, তাই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিম্ন আদালত জামিন দিতে পারেনি। আমরা সেই আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে জেলা দায়রা আদালতে সিআর মিস ফাইল করেছি। জেলা দায়রা জজ আজ ছুটিতে থাকায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শুনানি করেছেন। মামলার গুণগত দিক বিবেচনা করে আমরা শুনানিতে প্রমাণ করতে পেরেছি, হৃদয় মণ্ডল এমন ঘটনা ঘটনাননি বা অবমাননাকর কোনও কথা বলেননি। মামলার পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত পাঁচ হাজার টাকা বিল বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেছে। এটা স্থায়ী জামিন, অন্তর্বর্তী জামিন নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, এই অঞ্চলের মানুষ খুবই অসাম্প্রদায়িক ও সহনশীল। সেজন্য কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী খারাপ কিছু ঘটাতে পারবে না। তবে, তারা চেষ্টা করেছিল। তদন্ত করলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে কারা উসকানিমূলক এমন মামলা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করতে চেয়েছিল। হৃদয় মণ্ডল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাক এটাই চাই। কিছু কুচক্রিমহল কিছু করতেও পারে বলে আশঙ্কা করছি। তবে, আমার বিশ্বাস সম্প্রীতির বাংলাদেশে সেটা সম্ভব না।’

আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জামিন

মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ-ই-হাসান তুহীন বলেন, হৃদয় মণ্ডলের জামিন পাওয়াতে আমরা খুশি। এখন আমাদের দাবি, মামলাটি যেন ডিসমিস করে দেওয়া হয় এবং এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যারা আছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। হৃদয় মণ্ডল ও তার পরিবার যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সেই আশা করি।

মুন্সীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করেছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। যাতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেনও আর না ঘটে। পাশাপাশি হৃদয় মণ্ডল ও তার পরিবারের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং তিনি যেন আগের মতো স্বাভাবিকভাবে স্কুলে ক্লাস নিতে পারেন।

আরও পড়ুন: ‘ধর্ম অবমাননার কথা শুনিনি, প্রধান শিক্ষকের কথায় মামলা করেছি’

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকালে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় মামলা করেন।